বহির্বিশ্বে বাংলাদেশি নাবিকদের চাকরির বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিদেশি জাহাজ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি নাবিকদের চাকরি দিতে অনীহা প্রকাশ করছে, কারণ সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বাংলাদেশি নাবিক বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই পলায়নের ফলে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ অনেক দেশে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের নাবিকদের তীরে নামার ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। অন্যান্য দেশেও নাবিকদের পলায়ন রোধ করতে জাহাজে বডিগার্ড রাখতে হচ্ছে, যা জাহাজ কোম্পানিগুলোর জন্য অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থার ফলে দেশে প্রশিক্ষিত হয়ে বের হওয়া প্রায় দুই হাজার নাবিক বেকার হয়ে পড়ছে। ২০১০ সালে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া এমভি জাহান মনি জাহাজের একজন শিক্ষানবিশ ক্যাডেট, শরিফুল ইসলাম, বর্তমানে একজন চিফ অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে অনেক নাবিক ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়ার এক বছর পরও চাকরি পায় না। বাংলাদেশি মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী মনে করেন, নাবিকদের পলায়নের কারণ খুঁজে বের করা ও ভুঁইফোঁড় কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। নাবিকরা তিন মাস কাজ করে দুই মাস ছুটি পায়, তবুও অনেকে আমেরিকা ও ইউরোপে চলে যায়, যা দেশের নাবিক খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। নৌ-অধিদপ্তর গত কয়েক বছরে ১৯ জন নাবিকের পলায়নের তথ্য দিয়েছে, যার মধ্যে মেঘনা কোম্পানির তিনটি জাহাজের নাবিক রয়েছে। মেঘনা কোম্পানির ক্যাপ্টেন আমান উল্লাহ চৌধুরী এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর মেঘনা অ্যাডভেঞ্চার জাহাজ থেকে চার নাবিক পালিয়ে গেছে। নৌ-অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মাকসুদ আলম জানান, ১৯ জন নাবিকের বিরুদ্ধে নৌ-আদালতে মামলা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। নাবিকদের পলায়নের ফলে বিশ্বের অনেক বন্দরে বাংলাদেশি নাবিকদের তীরে নামার অনুমতি নেই এবং আমেরিকা, ইউরোপ, দুবাইসহ অনেক দেশের বন্দরে নামার অনুমতিও নেই। এই অবস্থার ফলে আমেরিকার বন্দরে জাহাজ গেলে চারজন করে বডিগার্ড রাখতে হচ্ছে, যা প্রতি ২০ দিনে প্রায় ৩৬ হাজার মার্কিন ডলার অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। ১৯ জন পলাতক নাবিকের তথ্যও উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৯ হাজার ৮৭৩ নাবিক সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরি করছেন, যদিও সনদধারী নাবিকের সংখ্যা ১৯ হাজার ৩৯১ জন।
বিদেশি জাহাজ কোম্পানি
মূল তথ্যাবলী:
- বিদেশি জাহাজ কোম্পানি বাংলাদেশি নাবিকদের চাকরি দিতে অনীহা প্রকাশ করছে।
- অনেক বাংলাদেশি নাবিক বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
- নাবিকদের পলায়ন রোধে জাহাজে বডিগার্ড রাখা ও অতিরিক্ত খরচের বোঝা পড়েছে।
- বিশ্বের অনেক বন্দরে বাংলাদেশি নাবিকদের তীরে নামার অনুমতি নেই।
- ১৯ জন পলাতক নাবিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
গণমাধ্যমে - বিদেশি জাহাজ কোম্পানি
বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি নাবিকদের চাকরি দিতে অনিচ্ছুক।