নেত্রকোণা: ময়মনসিংহ বিভাগের একটি ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ জেলা। প্রশাসনিকভাবে নেত্রকোণা জেলা ও সদর উপজেলার সদর দপ্তর নেত্রকোণা শহরে অবস্থিত। শহরটি ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এবং কংস, সোমেশ্বরী, গণেশ্বরী, মহেশ্বরী, গোরাউৎরা নদীসহ অন্যান্য শাখা নদীর জলধারায় সমৃদ্ধ। জেলার ভূমি উত্তরাংশে উঁচু এবং দক্ষিণ-পূর্বাংশে ঢালু।
ঐতিহাসিক দিক থেকে, চতুর্থ শতাব্দীতে নেত্রকোণা গুপ্ত সম্রাটদের অধীনে ছিল। পরবর্তীতে হিন্দু, মুসলিম, এবং ব্রিটিশ শাসনের অধীনে নানা ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে এ জেলা। আলাউদ্দিন হোসেন শাহ, নসরৎ শাহ, ঈশা খাঁ, দেওয়ান সুলায়মান খাঁ, খাজা উসমান খাঁ প্রমুখ শাসকদের আমলে এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ব্রিটিশ আমলে কৃষক বিদ্রোহ, পাগলপন্থী বিদ্রোহ, টংক আন্দোলন ও তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়। ১৯৪৫ সালে সর্বভারতীয় কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় নেত্রকোণা জেলার নাগড়ায়। ১৯৮৪ সালের ১৭ জানুয়ারি নেত্রকোণা মহকুমাকে জেলা ঘোষণা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোণার জনগোষ্ঠী সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেছেন এবং অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করেছেন।
নেত্রকোণার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের মধ্যে রয়েছে মদনপুরের হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী(র) মাজার, পুকুরিয়ার ধ্বংসপ্রাপ্ত দূর্গ, রোয়াইল বাড়ি দূর্গ, খোঁজার দিঘী, কমলা রাণী দিঘী, সাত পুকুর, হাসানকুলী খাঁর সমাধি, টংক শহীদ স্মৃতি সৌধ, রাণীমাতা রাশমণি স্মৃতি সৌধ, বিরিশিরি কালচারাল একাডেমী, রাণীখং মিশন, এবং কলমাকান্দার ০৭ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মাজার।
ভৌগোলিক দিক থেকে, নেত্রকোণা ২৭৯৪.২৮ বর্গ কিমি আয়তনের এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্য, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ জেলার সাথে সীমান্ত ভাগ করে। জনসংখ্যা প্রায় ২২,২৯,৬৪২ জন। জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, সরিষা, চিনাবাদাম প্রমুখ ফসল উৎপাদিত হয়। বিজয়পুরে সাদা মাটির বৃহৎ খনি রয়েছে। নেত্রকোণা জেলার দশটি উপজেলা এবং নেত্রকোণা শহর একটি উন্নয়নশীল নগর হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।