বগুড়া শহর: উত্তরবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও বাণিজ্যিক নগরী
বগুড়া শহর বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত বগুড়া জেলার প্রধান শহর। এটি উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। এই শহরের ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন; খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে পুণ্ড্রবর্ধন নামে এটি পরিচিত ছিল। বর্তমানে ১১ কিমি উত্তরে অবস্থিত মহাস্থানগড়, তৎকালীন পুণ্ড্রনগর, প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল এবং সম্রাট অশোকের শাসনামলে এর সৌন্দর্য ও স্থাপত্য বিখ্যাত ছিল।
বগুড়ার নামকরণ হয়েছে ১৩ শতকে বাংলার গভর্নর নাসিরউদ্দিন বুগরা খানের নামানুসারে। ৯ থেকে ১২ শতকে সেন রাজাদের শাসনামলে বরেন্দ্রভূমির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল বগুড়া; ১৩ শতকের শুরুতে এটি মুসলিম শাসকদের অধীনে আসে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বগুড়া ৭ নং বিডিএফ সেক্টরের অধীনে ছিল।
বগুড়া শহর করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট, দক্ষিণে নাটোর ও সিরাজগঞ্জ, পূর্বে যমুনা নদী ও জামালপুর এবং পশ্চিমে নওগাঁ জেলা অবস্থিত। ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক বগুড়ার মধ্য দিয়ে যায়; শহরের দুটি বাইপাস সড়ক যানবাহনের চাপ কমাতে সহায়তা করে। রাজধানী ঢাকার সাথে রেল ও সড়কপথে যোগাযোগ রয়েছে। বগুড়া সদর উপজেলায় একটি বিমানবন্দর থাকলেও এটি মূলত বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বগুড়া শহরের অর্থনীতি কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল। লাল মরিচের উৎপাদন বিখ্যাত, যা ১০০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা উন্নত; সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের শাখা এবং ২৪ ঘন্টা এটিএম সুবিধা রয়েছে। ২০০৮ সালে গ্রামীণ ড্যানোন এখানে শক্তিদই উৎপাদন শুরু করে।
পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বগুড়ার মহাস্থানগড় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও খেরুয়া মসজিদ, নওয়াব প্যালেস (ব্রিটিশ আমলে নীলকুঠি), বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘর, সৌদিয়া পার্ক উল্লেখযোগ্য। বগুড়ার দই ও মিষ্টি খুব বিখ্যাত।
বগুড়া শহরে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। পুন্ড্র বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া জিলা স্কুল, সরকারি আজিজুল হক কলেজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
আরো তথ্যের জন্য আমরা আপনাকে পরবর্তীতে আপডেট করব।