নান্দাইল উপজেলা: ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নান্দাইল উপজেলা, ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বর্তমান উন্নয়নের এক অসাধারণ সমন্বয়। ময়মনসিংহ শহর থেকে প্রায় ৪৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ উপজেলা ৩২৬.১৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তন জুড়ে বিস্তৃত। নামকরণের পেছনে রয়েছে এক জমিদার নন্দদুলালের নাম। তিনি আইল ব্যবস্থার মাধ্যমে জমিদারি সীমানা নির্ধারণ করেন এবং মুঘল আমলে খাজনা আদায়ে সাফল্য লাভ করেন। এর ফলে এ অঞ্চলের নামকরণ হয় "নান্দাইল"।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
নান্দাইলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে মুয়াজ্জামাবাদ (বর্তমান মোয়াজ্জেমপুর) ছিল পূর্ব বাংলার প্রশাসনিক কেন্দ্র। আঠারো শতকে নীলকরদের কুঠি স্থাপনের ফলে নীল আন্দোলনের সূচনা হয় নান্দাইলের দেওয়ানগঞ্জ বাজারে। লোকজ ঐতিহ্যের সঙ্গেও নান্দাইলের গভীর সম্পৃক্ততা রয়েছে। ময়মনসিংহ গীতিকার 'মলুয়া পালার' পটভূমি এই নান্দাইল উপজেলা।
মুক্তিযুদ্ধে নান্দাইলের অবদান:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নান্দাইল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এপ্রিল মাসে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়, এবং শুভখিলা রেলব্রিজ ধ্বংস করা হয়। ২১শে এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজগাতি, শুভখিলা ও কালীগঞ্জ এলাকায় ১৮ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে এবং কয়েকশ বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। ১৭ নভেম্বর, পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে এক রণক্ষেত্রে ইলিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া, শামসুল হক, জিল্লুল বাকি, শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া সহ ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এই দিনটিকে নান্দাইল শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১১ ডিসেম্বর, নান্দাইল মুক্ত হয় এবং এই দিনটিকে নান্দাইল মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
উত্তরে ঈশ্বরগঞ্জ, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ, পূর্বে কেন্দুয়া ও তাড়াইল এবং পশ্চিমে ত্রিশাল ও গফরগাঁও উপজেলা নান্দাইলের সীমান্তবর্তী। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, নরসুন্দা, বাথাইল, কাঁচামাটিয়া ও মঘা নদী নান্দাইলের প্রধান নদনদী। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী নান্দাইলের জনসংখ্যা ৩,২৮,৮৪৭ জন, এবং ২০১১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪,০২,৭২৭ জনে দাঁড়ায়।
অর্থনীতি:
নান্দাইলের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, আলু প্রধান কৃষি ফসল। কুটির শিল্প, তাঁতশিল্প, বেতের কাজ, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প ইত্যাদিও এখানে প্রচলিত।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
শিক্ষার দিক থেকে নান্দাইল উন্নত। উপজেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংস্কৃতির দিক থেকেও নান্দাইল সমৃদ্ধ। লাইব্রেরি, ক্লাব, থিয়েটার গ্রুপ, খেলার মাঠ ইত্যাদি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এখানে বিদ্যমান।
উপসংহার:
ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং উন্নয়নের পথে অগ্রগতির কারণে নান্দাইল উপজেলা ময়মনসিংহ জেলার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আগামী দিনে আরও উন্নয়নের মাধ্যমে নান্দাইল অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনমান উন্নত হবে বলে আশা করা যায়। তবে, নান্দাইলের সম্পূর্ণ উন্নয়ন এবং সম্পদ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে আমরা এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে পারব।