নকলা উপজেলা

আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:১২ পিএম

নকলা উপজেলা: শেরপুরের একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়

বাংলাদেশের শেরপুর জেলার অন্তর্গত নকলা উপজেলা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রশাসনিক এলাকা। ২৪°৫৯′০০″ উত্তর ৯০°১১′০০″ পূর্ব অক্ষাংশে অবস্থিত এই উপজেলা উত্তরে নালিতাবাড়ী, দক্ষিণে জামালপুর সদর ও ময়মনসিংহ সদর, পূর্বে ফুলপুর এবং পশ্চিমে শেরপুর সদর উপজেলার সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

নকলা নামটি আরবি ‘নাখলা’ থেকে এসেছে, যার অর্থ খেজুরের বাগান। এই নাম থেকেই অনুমান করা হয় এটি একটি প্রাচীন জনপদ। ব্রিটিশ আমলে প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র ও নৌবন্দর চন্দ্রকোনা এখানে অবস্থিত ছিল। চন্দ্রকোনায় মহারাজ শশীকান্ত চৌধুরী ও জমিদার গোপাল দাস চৌধুরীর কাঁচারী ছিল, যেখানে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করা হতো। এই অঞ্চলে ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চন্দ্রকোনা রাজলক্ষ্মী উচ্চ বিদ্যালয়, সূর্যবালা দেবী হাসপাতাল, পোস্ট অফিস ইত্যাদি শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী বিপ্লবী নগেন্দ্র চন্দ্র মোদক, যোগেশ চন্দ্র কর্মকার এবং মন্মথ দে চন্দ্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মোঘল আমলে নারায়ণখোলা গ্রামে সেনা ছাউনী ছিল। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর নকলা পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে মুক্তি পায়, বিশেষ করে পাঠাকাটা গ্রাম মুক্তিযুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:

১৭৪.৮ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত নকলা উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা এবং ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ১৮৯,৬৮৫।

অর্থনীতি:

নকলার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। ধান, পাট, আলু, শসা এবং অন্যান্য মৌসুমি ফসল এখানে উৎপাদিত হয়। বেলে ও বেলে দোঁয়াশ মাটিতে আলু ও বাদামের চাষ বেশ ভালো হয়।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:

শিক্ষার হার ৭৫.৫৩%, পুরুষ ৮১.৩০% এবং মহিলা ৭১.৬২%। নকলা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এখানকার একটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়াও, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থানীয়দের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা:

ঢাকা থেকে বাসযোগে ময়মনসিংহ হয়ে নকলায় সহজেই যাওয়া যায়।

উপসংহার:

নকলা উপজেলা শুধুমাত্র একটি প্রশাসনিক এলাকা নয়, এটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, প্রাচীন ঐতিহ্য এবং উর্বর কৃষিভূমি নকলাকে শেরপুর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • নকলা উপজেলা শেরপুর জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা।
  • পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়।
  • চন্দ্রকোনা ছিল একটি প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র ও নৌবন্দর।
  • মুক্তিযুদ্ধে নকলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • অর্থনীতি কৃষিনির্ভর।
  • শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্য।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - নকলা উপজেলা

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

শেরপুরের নকলা উপজেলার মধ্য কায়দা গ্রাম হল মো. হেলাল উদ্দিনের গ্রাম।