দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক: একটি বিস্তারিত আলোচনা
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বলতে দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মধ্যকার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বোঝায়। একপাক্ষিকতা বা বহুপাক্ষিকতার বিপরীতে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দুটি দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনা ও চুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। দুটি রাষ্ট্রের পারস্পরিক স্বীকৃতি ও কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন এর প্রাথমিক ভিত্তি। কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের আদান-প্রদান এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উদাহরণ হিসেবে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) এবং বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) উল্লেখযোগ্য। এই চুক্তিগুলি দুটি দেশের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয় এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ রাষ্ট্রগুলো অধিক সুবিধা লাভ করে। বহুপাক্ষিক কৌশলের তুলনায় লেনদেন ব্যয় বেশি হলেও, উভয় পক্ষের জন্য উৎপাদক উদ্বৃত্তি লাভের কারণে দ্বিপাক্ষিকতা সাধারণত লাভজনক।
ঐতিহাসিকভাবে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলিকে যুদ্ধের কারণ হিসেবে দেখা হতো। এর ফলে বহুদেশীয় সংস্থা যেমন, লীগ অব নেশন্স গঠিত হলেও তা স্থায়ী হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমা বিশ্ব বহুদেশীয় চুক্তি, যেমন GATT-এর দিকে ঝুঁকেছিল।
জাতিসংঘ ও WTO-এর মতো আধুনিক বহুদেশীয় সংস্থা থাকা সত্ত্বেও, অধিকাংশ কূটনীতি দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে হয়ে থাকে। দ্বিপাক্ষিকতার নমনীয়তা ও আপসের সুযোগ বহুপাক্ষিকতায় নেই। তবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলো বেশি সুবিধা ভোগ করে।
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের ইতিহাস জটিল ও বহুমাত্রিক। আর্যায়নের পর থেকেই এখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও উপজাতির মিথস্ক্রিয়া চলে আসছে। ধর্মীয় ও জাতিগত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও, দীর্ঘকাল ব্যাপী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় ছিল। পাল, সেন, তুর্কি-আফগান ও মুগল শাসকরা বিভিন্ন সম্প্রদায়কে শাসনে অংশীদার করেছিলেন। হিন্দু-মুসলমানদের পারস্পরিক সহাবস্থানের ঐতিহ্য ছিল। তবে ইউরোপীয়দের আগমন ও ব্রিটিশ শাসনের বর্ণবাদ হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্কে ভাঙন সৃষ্টি করে।
বিংশ শতাব্দীতে ধারাবাহিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ১৯৪৬ সালের কলকাতার হত্যাকাণ্ড বাংলার বিভাজনের পথ প্রশস্ত করে। ১৯৪৭ সালের পর অনেক হিন্দু পূর্ববাংলা ত্যাগ করে এবং অনেক মুসলমান ভারত থেকে আসে। ১৯৫০ সালে জমিদারি ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর কিছুটা শান্তি ফিরে এলেও, মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পরে বিহারিদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে, কিন্তু কিছু উপজাতীয় জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে চাকমারা, নিজেদেরকে বাঙালি বলে স্বীকার করতে অস্বীকার করে। এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘস্থায়ী সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়, যার পরে একটি শান্তিচুক্তি হয়।
ভূমিস্বত্বের ইতিহাসেও আর্য, সুলতানি, মুগল ও ব্রিটিশ আমলের ভূমি ব্যবস্থার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। প্রাচীনকালে রাজা কিংবা গ্রামসভা জমির মালিক ছিল বলে মনে করা হয়। মুগল আমলে জমিদার ও তালুকদার ব্যবস্থা ছিল। ব্রিটিশরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করে। ১৯৫০ সালে জমিদারি উচ্ছেদ এবং প্রজাদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্কের ইতিহাসে ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য, পানি বণ্টন এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক কখনো কখনো শীতল হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা ক্রমশ বাড়ছে।
বৈদেশিক নীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, মুক্ত বাণিজ্য, বৈদেশিক বিনিয়োগ, কূটনীতি