দেশে ফিরে আসা: এক বহুমুখী চ্যালেঞ্জ
বিভিন্ন কারণে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসা বাংলাদেশিদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা মহামারী, অর্থনৈতিক মন্দা, কাজের অভাব, নির্যাতন, আটক— এসব কারণেই তারা দেশে ফিরে আসছে। এই প্রবাসীদের ফিরে আসার পেছনে একাধিক জটিল সমস্যা লুকিয়ে আছে যা গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
করোনা মহামারীর প্রভাব: ২০২০ সালে করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর লাখ লাখ প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছিলেন। মহামারী কাটার পরও, কাজের অভাব, কম বেতন, নির্যাতনসহ নানা কারণে অনেকে দেশে ফিরছেন। একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরুর জরিপ অনুযায়ী, ২০২০ সালের পর ফিরে আসা ২১৮ জন কর্মীর মধ্যে ৩৫% কাজ না পেয়েই দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে ১৫% কোনো কাজই পাননি, ২০% তাদের চুক্তি অনুসারে কাজ পাননি এবং ১৪% কম বেতনের জন্য ফিরেছেন। অন্যদের আটক, বৈধ ভিসা না থাকা বা শারীরিক অসুস্থতার কারণে দেশে ফিরতে হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার: অনেক নারী প্রবাসী নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসছেন। রামরুর জরিপে এমন নারী কর্মীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। একজন নারী সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, সৌদি আরবে তার নিয়োগকর্তা তাকে যৌন নির্যাতন করত। ছয় মাস ধরে কষ্টের জীবন কাটিয়ে তিনি দেশে ফিরেছেন।
আর্থিক ক্ষতি ও পুনর্বাসন: বিদেশে গিয়ে ব্যর্থ হওয়ার ফলে প্রবাসীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন এবং এখন সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। তাদের অনেকের পুনর্বাসন ও পুনঃকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই।
সরকারী উদ্যোগ: সরকার বিদেশে গিয়ে প্রতারিত হওয়া প্রবাসীদের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে দাবি করেছে। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এসব প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে কিছু কিছু সেবা দিচ্ছে। তবে সরকারের উদ্যোগগুলি যথেষ্ট নয়।
লেবানন থেকে প্রত্যাবাসন: লেবাননের সাম্প্রতিক যুদ্ধের ফলে অনেক বাংলাদেশী দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকার লেবানন থেকে বিভিন্ন ফ্লাইটে বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছে।
সমাধানের পথ: এই সমস্যা সমাধানের জন্য দরকার প্রবাসী কর্মীদের সঠিকভাবে তথ্য দান, প্রশিক্ষণ, বৈধ রুটের মাধ্যমে নিয়োগ, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং দেশে ফিরে এসে তাদের পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা। দালালদের দমন ও বৈধ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করাও প্রয়োজন।