তাঁত শিল্প বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প। এর ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন, যার সঠিক উৎপত্তি নির্ণয় করা কঠিন হলেও, আদি বসাক সম্প্রদায়ের সাথে এর জড়িততা স্পষ্ট। তারা প্রথমে সিন্ধু উপত্যকায় বসবাস করতো এবং পরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও রাজশাহীতে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর ও ঢাকার ধামরাই এলাকায় তাঁদের বসতি স্থাপন করে। মনিপুরীরাও আদিকাল থেকেই তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত। তাঁদের তিন ধরনের তাঁতকল ছিল - কোমরে বাঁধা তাঁত, হ্যান্ডলুম তাঁত এবং থোয়াং।
মুঘল আমলে বাংলার তাঁত শিল্পের উন্নতমানের মসলিন ও জামদানি বিখ্যাত ছিল। ঢাকা, সোনারগাঁও, ধামরাই, বাজিতপুর, জঙ্গলবাড়ি প্রভৃতি স্থানে উন্নতমানের জামদানি তৈরি হতো। বর্তমানে এই জামদানি ঢাকা, সোনারগাঁও, আড়াইহাজার, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, মনোহরদী প্রভৃতি স্থানে তৈরি হয়। ডেমরা হাট জামদানির প্রধান বিক্রয় কেন্দ্র। জামদানি শাড়ীর পাশাপাশি এমব্রয়ডারি পোশাক, শুভেচ্ছা কার্ড, চিঠির প্যাড, বিয়ের আলপনা ইত্যাদিতেও এর ব্যবহার দেখা যায়।
ব্রিটিশ আমলে তাঁত শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্বাধীনতার পর তা পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম বোর্ড গঠিত হয় এবং ২০১৩ সালে তা পুনর্গঠিত হয় 'বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড' আইনের আওতায়। দেশের বস্ত্র উৎপাদনের প্রায় ৭০ ভাগ যোগান দিচ্ছে এই শিল্প। প্রায় ৫০ লাখ লোক এই শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিযুক্ত। বাংলাদেশের তাঁত শিল্পের উৎপাদিত পোশাক বিশ্ববাজারেও রপ্তানি করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের ধনেখালি ও শান্তিপুরের তাঁত শিল্প বিখ্যাত। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী প্রভৃতি স্থানের তাঁত শিল্পের ও সুনাম রয়েছে। নরসিংদীর শেখের মাঠ একসময় দেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের হাট ছিল। বর্তমানে হস্তচালিত তাঁতের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প সংকটের মুখোমুখি। তবে সরকার তাঁত শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে।