চট্টগ্রামের পাহাড়ি সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ উপজেলা ফটিকছড়ি: প্রকৃতির কোলে অবস্থিত এই উপজেলা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব সমন্বয়। ৭৭৩.৫৫ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে হাটহাজারী ও কাউখালী (রাঙ্গামাটি), পূর্বে রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি ও রাউজান এবং পশ্চিমে মিরসরাই ও সীতাকুন্ড উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ২২°৩৫´ থেকে ২২°৫৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৮´ থেকে ৯১°৫৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত ফটিকছড়িতে বসবাস করে প্রায় ৫২৬০০৩ জন মানুষ। এদের মধ্যে পুরুষ ২৫৯৭৩০ এবং মহিলা ২৬৬২৭৩। ধর্মীয় জনসংখ্যার বিভাজনে মুসলিম ৪৬৩৬৪০, হিন্দু ৫০৭৭৮, বৌদ্ধ ৮০৮৩, খ্রিস্টান ১৩৫ এবং অন্যান্য ৩৩৬৭। ত্রিপুরা, চাকমা, মারমা ও খিয়াং প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠী এই উপজেলার বর্ণাঢ্য সংস্কৃতির অংশ। ফটিকছড়ির প্রধান নদী ধুরং।
১৯১৮ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ফটিকছড়ি বর্তমানে উপজেলা। মুক্তিযুদ্ধে এই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ১৯৭১ সালের মার্চে এম আর সিদ্দিকী, মেজর জিয়াউর রহমান, জোনাল কমান্ডার মির্জা আবু মনসুর এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা রামগড়ে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প স্থাপন করেন। চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে যাওয়ার এবং ফিরে আসার পথ হিসেবে ফটিকছড়ি ব্যবহার করতেন, যার ফলে এটিকে ‘চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবেশদ্বার’ বলা হয়। নানুপুরে ছিল শরণার্থী শিবির। প্রায় ১৫০০ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে রয়েছে কোম্পানি টিলা, আহসানউল্লাহ গোমস্তার মসজিদ, কোটেরপাড় বৌদ্ধবিহার, আব্দুল্লাহপুর বৌদ্ধবিহার, কালীবাড়ি মন্দির (নানুপুর)। ফটিকছড়ির অর্থনীতিতে কৃষি, চা, রবার, ব্যবসা, চাকরি, প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার হার ৫১.৪%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ফটিকছড়ি ডিগ্রি কলেজ, ফটিকছড়ি করোনেশন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, এবং আরও অনেক। ফটিকছড়ি বার্তা, ফটিকছড়ি সংবাদ প্রভৃতি পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী প্রকাশিত হয়। বিবির হাট, মোহম্মদ তকির হাট প্রভৃতি হাটবাজার ও মেলা উল্লেখযোগ্য। সার্বিকভাবে, ফটিকছড়ি চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী উপজেলা।