মিরসরাই: চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী শহর
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত মিরসরাই উপজেলার সদর শহর হলো মিরসরাই। চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৫১.৬ কিলোমিটার দূরের এ শহরটি এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, শহরটির জনসংখ্যা প্রায় ১৯,৬০৪।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
মিরসরাইয়ের ইতিহাস সমৃদ্ধ এবং গভীর। ১৩৪০ সালে সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহ চট্টগ্রাম অধিকার করে এ অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে গৌড় সুলতান হোসেন শাহ ও নুসরাত শাহের আমলে পরাগল খাঁ ও ছুটি খাঁ এ অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিলেন। ষোড়শ শতাব্দীর শুরু থেকে এ অঞ্চল বাংলা সাহিত্যচর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। মুগল আমলে এবং ব্রিটিশ আমলেও মিরসরাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। মুক্তিযুদ্ধেও মিরসরাইয়ের অবদান উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল ক্যাপ্টেন অলি আহমদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধ করে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
মিরসরাই উপজেলার আয়তন ৪৮২.৮৮ বর্গ কিমি। এটি উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পূর্বে-পশ্চিমে অন্যান্য উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। ফেনী নদী মিরসরাইয়ের প্রধান নদী। উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্য।
অর্থনীতি:
মিরসরাইয়ের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, ডাল, আলু, বেগুন, শাকসবজি, বাঁশ ইত্যাদি প্রধান কৃষি ফসল। এছাড়াও মৎস্য চাষ, গবাদিপশু পালন, বিভিন্ন কুটির শিল্প (স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প) ও ব্যবসা-বাণিজ্য এখানে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
শিক্ষার দিক থেকে মিরসরাই অপেক্ষাকৃত উন্নত। এখানে বেশ কিছু কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংস্কৃতির দিক থেকেও মিরসরাই সমৃদ্ধ। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ঐতিহাসিক স্থাপনা, মেলা, এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এ শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করে।
উপসংহার:
মিরসরাই একটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ শহর। এর ঐতিহ্য, প্রকৃতি, এবং মানুষের সমন্বয়ে গঠিত একটি সুন্দর শহর।