গ্যাস: বাংলাদেশের জ্বালানি ও অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ
সাধারণ তাপমাত্রায় বায়বীয় অবস্থায় থাকা পদার্থকে গ্যাস বলে। এটি পদার্থের একটি ভৌত অবস্থা, চাপ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তরল ও কঠিন অবস্থায় পরিবর্তন করা সম্ভব। H2, N2, O2, CO2 এর মতো বিভিন্ন গ্যাস রয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস, ভূত্বক থেকে প্রাপ্ত দাহ্য গ্যাসের মিশ্রণ, মিথেন, ইথেন, প্রোপেন ইত্যাদি উপাদান নিয়ে গঠিত। নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড ও হাইড্রোজেন সালফাইড এর মতো প্রচলিত অপদ্রব্যও থাকতে পারে।
- *বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস:** বাংলাদেশ সবসময়ই প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে পরিচিত। সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম অঞ্চল ও বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এলাকায় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবেশবান্ধব এই জ্বালানি গৃহস্থালী, শিল্প (ধাতুমলবিদ্যা, মৃৎশিল্প, কাচ, খাদ্য, বিদ্যুৎ, সিমেন্ট ইত্যাদি) ও কৃষিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, রাসায়নিক শিল্পে কৃত্রিম সার, প্লাস্টিক, রজন ইত্যাদি তৈরিতে এর ব্যবহার রয়েছে।
- *অনুসন্ধান ইতিহাস:** ১৮৮৩ সালে আসাম রেলওয়ে এন্ড ট্রেডিং কোম্পানি প্রথম হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধান শুরু করে। ১৯১১ সালে আসাম অয়েল কোম্পানি ও বার্মা অয়েল কোম্পানিও এ কাজে যুক্ত হয়। ১৯৫৫ সালে বার্মা অয়েল কোম্পানি বাংলাদেশে প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে। ১৯১৪ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৬২ টি কূপ খনন করা হয়েছে। এই সময়ে ১টি তেল ও ২৩টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৯৫৯ সালে ছাতক গ্যাসক্ষেত্র থেকে শিল্পখাতে প্রথম গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়, ১৯৬৮ সালে শওকত ওসমানের বাসায় প্রথম গার্হস্থ্য গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়।
- *গ্যাসক্ষেত্র:** ২০১০ সাল পর্যন্ত ২৩টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে ২টি ও পূর্বাঞ্চলে বাকিগুলি। মোট মজুত প্রায় ২৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট, উত্তোলনযোগ্য মজুত প্রায় ২১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাসের গঠন প্রায় ৯৫-৯৯% মিথেন। তিতাস, সিলেট, কৈলাশটিলা, হবিগঞ্জ, সালদানদী, জালালাবাদ, সাঙ্গু প্রমুখ গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে।
- *গ্যাসের ব্যবহার ও চাহিদা:** গ্যাসের দৈনিক গড় উৎপাদন প্রায় ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, চাহিদা প্রায় ২৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বিদ্যুৎ, সার, শিল্প, গৃহস্থালী, পরিবহন ইত্যাদিতে এর ব্যবহার ব্যাপক। উৎপাদন বৃদ্ধি, নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এবং বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার জরুরি।
- *গ্যাস পাইপলাইন:** গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। তিতাস, জালালাবাদ ও বাখরাবাদ গ্যাস সুবিধাভোগী এলাকা রয়েছে। জিটিসিএল গ্যাস পাইপলাইন পরিচালনা করে।
- *গ্যাসের বাজারজাতকরণ:** ১৯৬০ সাল থেকে গ্যাস উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শুরু হয়। পেট্রোবাংলা, এর সহায়ক কোম্পানি এবং আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি এতে যুক্ত। বিদ্যুৎ, সার, শিল্প, বাণিজ্য ও গার্হস্থ্য খাতে গ্যাস ব্যবহার হয়। গ্যাস রপ্তানির বিষয়টি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।
- *সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস (সিএনজি):** যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত উচ্চ চাপের প্রাকৃতিক গ্যাস। পরিবেশবান্ধব এই জ্বালানি বায়ু দূষণ কমায়। ঢাকা শহরে বিভিন্ন সিএনজি রূপান্তর কেন্দ্র রয়েছে। আরপিজিসিএল ও বেসরকারি উদ্যোগ এ কাজে যুক্ত।
- *তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি):** প্রপেন ও বুটেনের মিশ্রণ, প্রাকৃতিক গ্যাস বা তেল থেকে উৎপাদিত। রান্নায়, যানবাহনে ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এর ব্যবহার বাড়ছে।