মতিঝিল: ঢাকার বাণিজ্যিক হৃৎপিণ্ড
ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মতিঝিল বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা। এটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ। মতিঝিলের নামকরণের পেছনে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় ইতিহাস। মোগল আমলে মীরজা মোহাম্মদের মহলের অংশ ছিল এটি, যেখানে একটি বড় পুকুর ছিল, যা পরবর্তীতে 'সুকাকু মহলের পুকুর' হিসাবে পরিচিত হয়। জনশ্রুতি আছে যে, এক সময় এ পুকুরে মুক্তা ছড়িয়ে পড়েছিল, যার কারণে এর নামকরণ হয় 'মতিঝিল'।
ব্রিটিশ আমলে ঢাকার নওয়াব পরিবারের সম্পত্তিতে পরিণত হয় মতিঝিল। নবাব আব্দুল গণির সময় এখানে একটি সুন্দর বাগান স্থাপন করা হয়। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের সরকারের জন্য ব্রিটিশ সরকার গভর্নর ভবন নির্মাণের জন্য নবাব সলিমুল্লাহর কাছ থেকে এলাকাটি অধিগ্রহণ করে। এরপর থেকেই মতিঝিল ধীরে ধীরে ঢাকার প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়।
আধুনিক মতিঝিল:
আজকের মতিঝিল ঢাকার আর্থিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দু। এখানে অবস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, বহু জাতীয় ও বেসরকারি ব্যাংক, বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর, সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়, আকাশচুম্বী অসংখ্য অফিস ভবন এলাকাটিকে করে তুলেছে একটি ব্যস্ততম এলাকায়। মতিঝিল থানার আয়তন ৪.৬৯ বর্গ কিলোমিটার এবং বর্তমানে এখানে ২২৩৬৭৬ জন মানুষ বসবাস করে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
মতিঝিলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে পীর জঙ্গীর (র.) মাজার, উত্তর শাহজাহানপুরে শাহ আমীর আলী বোগদাদীর (র.) মাজার এই এলাকার ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয় এলাকাটি।
মতিঝিলের ভবিষ্যৎ:
দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে মতিঝিলের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ উভয়ই রয়েছে। নিরাপত্তা, পরিবেশ দূষণ, জনসাধারণের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, ঐতিহ্য রক্ষা এইসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। মতিঝিলের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ করে ভবিষ্যতে এটি ঢাকার একটি আধুনিক ও গতিশীল বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বহন করবে।