কাইয়ুম চৌধুরী (৯ মার্চ ১৯৩২ - ৩০ নভেম্বর ২০১৪) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের চিত্রশিল্পীদের অন্যতম এবং প্রচ্ছদ শিল্পী হিসেবে তাঁর অবদান অতুলনীয়। ১৯৮৬ সালে তাঁকে একুশে পদক এবং ২০১৪ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
কাইয়ুম চৌধুরী ১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনী জেলায় একটি ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবদুল কুদ্দুস চৌধুরী ছিলেন সমবায় বিভাগের পরিদর্শক এবং পরবর্তীতে সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চাকরির সুবাদে তাঁর পরিবার চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নড়াইল, সন্দ্বীপ, নোয়াখালী, ফেনী, ফরিদপুর এবং ময়মনসিংহে বসবাস করে। শৈশবে তিনি বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে পরিচিত হন, যা তাঁর শিল্পকর্মে প্রতিফলিত হয়।
১৯৪৯ সালে ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর, তিনি ১৯৪৯ সালে ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউট (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) এ ভর্তি হন এবং ১৯৫৪ সালে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ছিলেন তাঁর শিক্ষক। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিজ্ঞাপনী সংস্থা এবং বইয়ের প্রচ্ছদ ও সচিত্রকরণের কাজে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে ঢাকা আর্ট কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬১ সালে তাহেরা খানমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
তেল রঙ, জল রঙ, কালি-কলম, মোম রঙ, রেশমছাপ ইত্যাদি নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন। তাঁর চিত্রকর্মে জ্যামিতিক আকৃতির প্রাধান্য লক্ষ্যণীয়। বর্ণিল পটভূমিতে মোটা দাগের নকশা তাঁর প্রধান অঙ্কনশৈলী। তাঁর ছবির আয়তন প্রায়শই বর্গাকার। এছাড়া, তাঁর চিত্রকর্মে বাংলাদেশের লোকশিল্পের পুতুল, পাখা, হাঁড়ি, শীতলপাটি, কাঁথা ইত্যাদির পুনঃপুন ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ২০১০ সালে সুফিয়া কামাল পদক লাভ করেন এবং ২০১৪ সালে শহীদ আলতাফ মাহমুদ পদকে ভূষিত হন। ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ক্ল্যাসিকাল মিউজিক ফেস্টিভালের চতুর্থ দিনে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মৃত্যুবরণ করেন।