কামাল লোহানী: একজন অসামান্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা
কামাল লোহানী (২৬ জুন ১৯৩৪ - ২০ জুন ২০২০) বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যিনি সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা জগতে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সাংবাদিক, কৃতী সংস্কৃতিকর্মী, এবং মুক্তিযুদ্ধের একজন অংশগ্রহণকারী।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
তিনি ১৯৩৪ সালের ২৬ জুন তৎকালীন পাবনা জেলার (বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলা) সোনতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবু ইউসুফ মোহাম্মদ মুসা খান লোহানী ও মাতা রোকেয়া খান লোহানী। তার আসল নাম আবু নঈম মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল খান লোহানী। কলকাতার শিশু বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা শুরু করে ১৯৪৮ সালে পাবনায় চলে আসেন। ১৯৫২ সালে পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন:
ছাত্রজীবন থেকেই কামাল লোহানী রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সালে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রেপ্তার হন এবং শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সাথে কারাভোগ করেন। তিনি ঢাকায় চলে আসার পর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির রাজনীতি করেন এবং পরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সদস্য ছিলেন।
সাংবাদিকতা ও সংস্কৃতি:
১৯৫৫ সালে চাচাতো ভাই ফজলে লোহানীর সহায়তায় দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় যোগদানের মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক বার্তা, দৈনিক জনপদ, বঙ্গবার্তা, দৈনিক বাংলার বাণীসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। সাংবাদিক ইউনিয়নে যুগ্ম-সম্পাদক এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী পালনের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ছায়ানট সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৭ সালে ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী গঠন করেন এবং ‘ধানের গুচ্ছে রক্ত জমেছে’ গানসহ অনেক গান ও নাটকে অংশগ্রহণ করেন। বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নৃত্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী জীবন:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের সংবাদ বেতারে তিনিই প্রথম পাঠ করেন। ১৯৭২ সালে ঢাকা বেতারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে এবং ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ছিলেন এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৫ সালে সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হন।
মৃত্যু:
২০২০ সালের ২০ জুন ৮৬ বছর বয়সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
কামাল লোহানী (সাংবাদিক)
• ২৬ জুন ১৯৩৪ সালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
• ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
• স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান ছিলেন।
• বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ছিলেন।
• ২০০৯-২০১১ সালে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন
• ২০১৫ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
• ২০ জুন ২০২০ সালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা কামাল লোহানীর জীবনী, কাজ ও অবদান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
[ "বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি", "ছায়ানট", "ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী", "বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী", "একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি", "সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট", "বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)", "ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি"]
[ "শেখ মুজিবুর রহমান", "তাজউদ্দীন আহমদ", "নুরুল আমিন", "জি এ মান্নান", "ফজলে লোহানী", "মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম", "নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু", "মনজুরুল আহসান বুলবুল"]
[ "সোনতলা গ্রাম, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ", "পাবনা", "ঢাকা", "কলকাতা", "তেজগাঁও বিমানবন্দর", "দমদম বিমানবন্দর (বর্তমান নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর)", "রাজশাহী", "পল্টন ময়দান", "মহাখালী"]
[ "কামাল লোহানী", "বাংলাদেশি সাংবাদিক", "সংস্কৃতিকর্মী", "মুক্তিযোদ্ধা", "একুশে পদক", "স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র", "শিল্পকলা একাডেমি", "ছায়ানট", "ক্রান্তি", "উদীচী"]