এইচএম এরশাদ

আপডেট: ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৭:২১ পিএম

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০ – ১৪ জুলাই ২০১৯) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট সাবেক সেনাপ্রধান ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। তার রাষ্ট্রপতি আমলকে অনেকে সামরিক একনায়তন্ত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করে থাকেন। তিনি জাতীয় পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন উপ-দলে বিভক্ত হয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

একজন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে, ১৯৮৩ সালে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ সালে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি করে তিনি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করেন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গণবিক্ষোভের মুখে তাকে পদত্যাগ করতে হয়।

১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। রংপুরে শিক্ষা লাভের পর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫১ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৫২ সালে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬০-৬২ সালে চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কেন্দ্রে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৭ সালে কোয়েটার স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে শিয়ালকোটে ৫৪ ব্রিগেডের মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৬৯-৭০ সালে তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এবং ১৯৭১-৭২ সালে সপ্তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি রংপুরে ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৭৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি কর্নেল ও ১৯৭৫ সালের জুনে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৮ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করে একই বছরের ডিসেম্বরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর, ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন। ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার শাসনামলে উপজেলা পদ্ধতি চালু হয় এবং ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিরোধী দলের প্রবল আন্দোলনের পর, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি ক্ষমতা থেকে সরে যান।

ক্ষমতা হারানোর পর তিনি গ্রেফতার হন এবং ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে কারাগার থেকে তিনি রংপুরের একাধিক আসন থেকে নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলা হয় এবং তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। ১৯৯৭ সালে জামিনে মুক্তি পান। ২০০০ সালে তার জাতীয় পার্টি তিন ভাগে বিভক্ত হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার দল সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, এবং তার স্ত্রী রওশন এরশাদ প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা হন। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৮৩-১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন
  • জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা
  • সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল
  • ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ
  • উপজেলা পদ্ধতি চালু
  • বহুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।