ইরানের সামরিক বাহিনী

আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ এএম

ইরানের সামরিক বাহিনী একটি জটিল ও বহুমুখী সংস্থা, যার ইতিহাস দীর্ঘ এবং অত্যন্ত জটিল। আড়াই হাজার বছরের ইতিহাস ধারণকারী এই বাহিনী আধুনিক অস্ত্র প্রযুক্তিতে সজ্জিত হওয়ার শুরুটা করেছিল রেজা শাহ পাহলভির আমলে ১৯২০ এর দশকে। তিনি 'আরতেশ' বাহিনী গঠন করেন, যা আধুনিক ইরানি সামরিক বাহিনীর সূচনা বলে বিবেচিত হয়। তিনি হাজারো অফিসারকে বিদেশে মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠান এবং পশ্চিমা অফিসারদের নিয়োগ দেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ইরান দখল করে। এরপর রাজার আসনে বসেন মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। তাঁর শাসনামলে, ইরানের তেলের সম্পদ ব্যবহার করে ৬০ ও ৭০ দশকে আমেরিকা থেকে প্রচুর আধুনিক অস্ত্র কেনা হয়। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। আয়াতোল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবী বাহিনী গঠিত হয়। মার্কিন দূতাবাস দখল এবং ৪৪৪ দিনের জিম্মি সংকটের পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, যার ফলে ইরানের উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়।

ইরান-ইরাক যুদ্ধ (১৯৮০-১৯৮৮) ইরানি সামরিক বাহিনীর উপর গভীর প্রভাব ফেলে। যুদ্ধের সময় ইরান অবৈধভাবে লিবিয়া থেকে স্কাড মিসাইল ও যন্ত্রাংশ আনয়ন করে এবং রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে নিজেদের অস্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করে। উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া থেকেও তারা অস্ত্র সরবরাহ পেয়েছে। যুদ্ধের পর ইরান নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দেয়। বিশেষ করে ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল, ড্রোন প্রযুক্তি এবং সাইবার যুদ্ধে তারা উন্নতি সাধন করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া গোষ্ঠীর সাথে তাদের নেটওয়ার্ক শক্তিশালী হয়েছে।

বর্তমানে ইরানের সামরিক বাহিনীতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) রয়েছে। তাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের বন্দুক, ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, রকেট লঞ্চার, ক্ষেপণাস্ত্র (শাহাব-৩, হাজ কাসেম, খেইবার, সেজিল), ড্রোন, যুদ্ধবিমান এবং ডুবোজাহাজ রয়েছে। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে ইরান বিশ্বের ১৪তম স্থানে রয়েছে। তবে ইরানের অস্ত্র সম্পর্কে সঠিক ও সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া কঠিন। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান কীভাবে এই সামরিক সক্ষমতা অর্জন করেছে তা একটা বড় প্রশ্ন। প্রাকৃতিক সম্পদ, আনঅফিসিয়াল বাণিজ্য এবং নানা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইরানের ভৌগোলিক অবস্থান ও নেতৃত্বের সিদ্ধান্তও এর সাথে জড়িত।

মূল তথ্যাবলী:

  • ইরানের সামরিক বাহিনীর ইতিহাস ২৫০০ বছরেরও বেশি পুরোনো।
  • রেজা শাহ পাহলভির আমলে আধুনিকায়ন শুরু।
  • ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর নতুন গঠন।
  • ইরান-ইরাক যুদ্ধের প্রভাব ও স্বনির্ভর অস্ত্র উৎপাদনে মনোযোগ।
  • বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের উন্নত অস্ত্র ও প্রযুক্তির অধিকারী।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - ইরানের সামরিক বাহিনী

ইরানের সামরিক বাহিনী যেকোনো হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত।