কাসেম সোলেইমানি: একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর (আইআরজিসি) কুদস বাহিনীর সাবেক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলেইমানি (১১ মার্চ ১৯৫৭ - ৩ জানুয়ারি ২০২০) মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তার জন্ম ইরানের কেরমান প্রদেশের কানাত-ই মালেক গ্রামে। তিনি একজন ফার্সিভাষী এবং লুর জাতিগোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সোলেইমানি ১৩ বছর বয়সে কাজে যোগ দিয়েছিলেন, নির্মাণ শ্রমিক ও ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের পর তিনি ইসলামি বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীতে (আইআরজিসি) যোগ দেন এবং দ্রুত উন্নতি লাভ করেন।
ইরান-ইরাক যুদ্ধ (১৯৮০-১৯৮৮) কালে তিনি ৪১তম সারল্লাহ বিভাগের কমান্ডার ছিলেন এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধের পর, তিনি কেরমান প্রদেশে আইআরজিসির কমান্ডার ছিলেন এবং ১৯৯৮ সালে কুদস বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। কুদস বাহিনী আইআরজিসির একটি বিশেষ বাহিনী, যা বহির্দেশে গোপন অভিযান পরিচালনার জন্য দায়ী।
সোলেইমানি কুদস বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদের সরকারের প্রধান সামরিক উপদেষ্টা ছিলেন এবং ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএল) এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ইরাকি সরকার ও শিয়া মিলিশিয়াকে আইএসআইএলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করেছিলেন।
তার সামরিক দক্ষতা এবং কৌশলের জন্য তাকে প্রশংসা করা হয় এবং অনেকের কাছে তিনি ইরানের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হতেন। তবে, পশ্চিমা দেশগুলি তাকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল এবং তার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।
২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ইরাকের বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় তিনি নিহত হন। তার মৃত্যুর পর ইরানে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে ব্যাপক শোক ও প্রতিবাদ হয়।
সোলেইমানির জীবন ও কাজ বিতর্কিত এবং বহুমাত্রিক। তার নেতৃত্বগুণ, সামরিক দক্ষতা, এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে তার প্রভাব অস্বীকার করা যায় না। তবে একই সাথে তার কর্মকাণ্ডের নৈতিক ও আইনগত দিকগুলোও নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই নিবন্ধে তার জীবনী ও কাজ সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তবে আরও বিশদ তথ্যের জন্য ভবিষ্যতে আপনাকে আপডেট করা হবে।