আবু তালেব

আবু তালেব: একাধিক পরিচয়ের অধিকারী ব্যক্তিত্ব

বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাসে ‘আবু তালেব’ নামটি একাধিক ব্যক্তির সাথে জড়িত। তাই, এই নামের সাথে যুক্ত তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তির জীবনী সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

  • *১. বীর উত্তম শহীদ আবু তালেব:**

১৯৪৮ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কালুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণকারী আবু তালেব বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি সাতক্ষীরায় কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং ৮ নম্বর সেক্টরের হাকিমপুর সাবসেক্টরে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। খুলনার বৈকালী, সাতক্ষীরার ভোমরা সহ আরও কয়েকটি যুদ্ধে তিনি বীরত্বের সাক্ষ্য দেন। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে লক্ষ্মীপুরে পাকিস্তানি সেনাদের অস্থায়ী ক্যাম্পে আক্রমণের সময় তিনি শহীদ হন। সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। তার গেজেট নম্বর ৫৩।

  • *২. খন্দকার আবু তালেব:**

খন্দকার আবু তালেব (১৯২১-১৯৭১) ছিলেন একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী। সাতক্ষীরা জেলার সাতানী গ্রামে জন্মগ্রহণকারী খন্দকার আবু তালেব ‘লুব্ধক’ ছদ্মনামে বিভিন্ন জনপ্রিয় কলাম লিখতেন। তিনি দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইনসাফ, পাকিস্তান অবজারভার, দৈনিক সংবাদ, ইত্তেফাক ও পয়গাম প্রভৃতি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং অপারেশন সার্চলাইট এর সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন। তার নামে স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশিত হয়েছে।

  • *৩. মির্জা আবু তালেব খান:**

মির্জা আবু তালেব খান (১৭৫২-১৮০৬) ছিলেন প্রথম দিকের ভারতীয় পর্যটকদের মধ্যে অন্যতম যিনি পাশ্চাত্য দেশ ভ্রমণ করে তার বিবরণ লিখেছেন। লক্ষ্ণৌতে জন্মগ্রহণকারী আবু তালেব খান ইউরোপ ভ্রমণ করে ‘মাসায়ের তালেবি ফি বালাদ আফরেঞ্জি’ (ইউরোপে তালেবের ভ্রমণবৃত্তান্ত) নামক ফারসি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থটি পরবর্তীতে ইংরেজিতে অনুবাদিত হয় এবং এটি ইউরোপীয় জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। তিনি ভারতীয় ও ইউরোপীয় জীবনযাত্রার তুলনামূলক বিশ্লেষণও উপস্থাপন করেছেন।

এই তিনজন আবু তালেবই তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রেখেছেন এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে তাদের স্মৃতি স্থায়ী হয়ে আছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • বীর উত্তম শহীদ আবু তালেব স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন।
  • খন্দকার আবু তালেব একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী ছিলেন।
  • মির্জা আবু তালেব খান একজন বিখ্যাত ভ্রমণকারী ও লেখক ছিলেন যিনি ইউরোপ ভ্রমণের বিবরণ রেখে গেছেন।

গণমাধ্যমে - আবু তালেব

২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

নৌকার মাঝি আবু তালেব ডাকাতি সম্পর্কে বিবরণ দিয়েছেন।