কুমারখালী

কুমারখালী: কুষ্টিয়ার ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্গত একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যমণ্ডিত শহর কুমারখালী। পদ্মা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত এই শহরের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন জনশ্রুতি প্রচলিত আছে। কেউ কেউ মনে করেন, নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-এর আমলে কমরকুলি খাঁ নামে একজন কালেক্টরের নামানুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ হয় ‘কমরখালী’, যার অপভ্রংশ ‘কুমারখালী’। আবার অন্যরা মনে করেন, কুমার নদীর খালের নিকটবর্তী অবস্থানের কারণে এর নামকরণ হয়েছে কুমারখালী।

ঐতিহাসিক দিক থেকে কুমারখালী অত্যন্ত সমৃদ্ধ। একসময় এটি ফরিদপুর ও যশোরের অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীতে রাজশাহী, পাবনা, নদীয়া এবং অবশেষে কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৫৭ সালে পাবনা জেলার অধীনে কুমারখালী, খোকসা, পাংশা ও বালিয়াকান্দী থানা নিয়ে কুমারখালী মহকুমার জন্ম হয়, যদিও ১৮৭১ সালে এটি পুনরায় থানায় পরিণত হয়। কুমারখালী এক সময় নাটোর রাজ্য এবং পরে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর জমিদারির অধীনে ছিল। রাণী ভবানী ও তাঁর উত্তরাধিকারীদের নির্মিত মন্দির ও জনহিতকর কর্মের কিছু নিদর্শন এখনও এখানে বিদ্যমান। ১৮৬৯ সালে কুমারখালীতে প্রথম পৌরসভা গঠিত হয়।

কুমারখালীর ভৌগোলিক অবস্থান ২৩°৪৪´ থেকে ২৩°৫৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৯´ থেকে ৮৯°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। এর আয়তন ২৫৮.১৮ বর্গ কিমি। পদ্মা, গড়াই ও কালীগঙ্গা নদী এবং ডাকুয়া খাল এ উপজেলার উল্লেখযোগ্য জলাশয়। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী কুমারখালীর জনসংখ্যা ৩২৮৪৫৭, যার মধ্যে পুরুষ ১৬৩৪৬১ এবং মহিলা ১৬৪৯৯৬। এখানে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বসবাস রয়েছে।

অর্থনীতিতে কৃষি প্রধান ভূমিকা পালন করে। ধান, গম, পাট, আখ, ভুট্টা প্রধান কৃষি ফসল। তবে কুটির শিল্প যেমন তাঁতশিল্প, সুচিশিল্প, বুননশিল্প, মৃৎশিল্প, বেতের কাজ, বাঁশের কাজ ইত্যাদিও উল্লেখযোগ্য। বুলবুল টেক্সটাইল, হীরা টেক্সটাইল, রানা টেক্সটাইল, ইলোরা টেক্সটাইল, ইস্টার্ন ফেব্রিকস সহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা এখানে অবস্থিত।

শিক্ষার দিক থেকে কুমারখালী অপেক্ষাকৃত উন্নত। কুমারখালী ডিগ্রি কলেজ, পান্টি ডিগ্রি কলেজ, কুমারখালী এম এন পাইলট হাইস্কুলসহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখানে রয়েছে। সাংস্কৃতিক দিক থেকেও কুমারখালী সমৃদ্ধ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি, বাউল শিল্পী লালন সাঁই এর মাযার, গোপীনাথের মন্দির, খোরশেদ শাহের মাযার এবং ঐতিহাসিক মসজিদগুলি কুমারখালীর গৌরব বৃদ্ধি করেছে। মুক্তিযুদ্ধে কুমারখালী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

সামগ্রিকভাবে, কুমারখালী ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। এটি অতীতের ঐতিহ্য ধারণ করে আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • কুমারখালী কুষ্টিয়া জেলার একটি প্রাচীন শহর
  • পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত
  • রাণী ভবানী ও ঠাকুর জমিদারির সাথে সম্পৃক্ত
  • ১৮৬৯ সালে প্রথম পৌরসভা গঠিত হয়
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও লালন সাঁই এর সাথে সম্পর্কিত