আনোয়ার নামটি বহু ব্যক্তি, ঘটনা ও প্রেক্ষাপটের সাথে জড়িত। প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, আমরা বিভিন্ন আনোয়ারের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। প্রথমত, আছে ডঃ আনোয়ার হোসেন (১৯৩১-২০০৭), বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট পারমাণবিক পদার্থবিদ ও লেখক-গবেষক। টাঙ্গাইলের নাল্লাপাড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া এই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথেও কাজ করেছেন এবং ১০০ টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।
দ্বিতীয় ব্যক্তি আনোয়ার খান, বানিয়াচঙের একজন জমিদার, যিনি মুগল আগ্রাসনের সময় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তার জমিদারি ছিল বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার অংশ। তিনি মুসা খানের সাথে মুগলদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, কিন্তু পরে আত্মসমর্পণ করেন। তার বীরত্ব ও ষড়যন্ত্রের কাহিনী ইতিহাসে লিপিবদ্ধ।
তৃতীয় আনোয়ার হলেন আনোয়ার পাশা (১৯২৮-১৯৭১), একজন বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ এবং সাহিত্যিক। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে জন্ম নেওয়া আনোয়ার পাশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি কবি, ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের একনিষ্ঠ সমর্থক। দুঃখের বিষয়, তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন।
চতুর্থ ব্যক্তি গাজী মাজহারুল আনোয়ার (১৯৪৩-২০২২), একজন মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র রচয়িতা, পরিচালক ও প্রযোজক। কুমিল্লার তালেশ্বর গ্রামে জন্ম নেওয়া এই ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় 'জয় বাংলা বাংলার জয়' গান রচনা করেন। তিনি বহু চলচ্চিত্রের গান রচনা ও সুর করেছেন এবং ৪০ টিরও বেশি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। তিনি একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।
শেষ ব্যক্তি হলেন মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন (১৯৪৮-১৯৭১), একজন সামরিক কর্মকর্তা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। চাঁদপুরে জন্মগ্রহণকারী এই ব্যক্তি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করে শহীদ হন এবং 'বীর উত্তম' খেতাব লাভ করেন।
অন্য একজন আনোয়ার হলেন আনোয়ার উল আলম শহীদ (১৯৪৭-২০২০), ষাটের দশকের ছাত্রনেতা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান, জাতীয় রক্ষীবাহিনীর উপপ্রধান, সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং লেখক। টাঙ্গাইলের জন্ম এই ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় ও কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন।