বিজ্ঞান: জ্ঞানের বৈজ্ঞানিক অন্বেষণ
বিজ্ঞান, শব্দটির উৎপত্তি ল্যাটিন শব্দ ‘সায়েনটিয়া’ থেকে, যার অর্থ ‘জ্ঞান’। পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য ঘটনার নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা, গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডার এবং তা অর্জনের পদ্ধতিই বিজ্ঞান। এটি প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান যা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে। বিজ্ঞানের চর্চার সূত্রপাত ৩০০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন মিশর ও মেসোপটেমিয়ায়। তাদের গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রের জ্ঞান গ্রিক সভ্যতার দর্শনে প্রভাব ফেলে। পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর পশ্চিম ইউরোপে বিজ্ঞানের অগ্রগতি মন্থর হয়, কিন্তু ইসলামী স্বর্ণযুগে তা সংরক্ষিত ও সমৃদ্ধ হয়। ১০ম থেকে ১৩শ শতকে গ্রিক ও ইসলামী জ্ঞান পুনর্জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৬শ শতকের বৈজ্ঞানিক বিপ্লব নতুন আবিষ্কার ও চিন্তাধারার সূচনা করে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি জ্ঞান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯শ শতকে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার পেশাদারীকরণ শুরু হয়।
আধুনিক বিজ্ঞানের প্রধান তিনটি শাখা হলো: প্রাকৃতিক বিজ্ঞান (পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান), সামাজিক বিজ্ঞান (অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান), এবং আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান (গণিত, যুক্তিবিদ্যা)। ফলিত বিজ্ঞান প্রকৌশল ও চিকিৎসাশাস্ত্রের মতো ক্ষেত্রগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। বিজ্ঞান গবেষণার উপর নির্ভর করে, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলিতে পরিচালিত হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণার বাস্তবিক প্রভাব বৈজ্ঞানিক নীতি গ্রহণে বাধ্য করেছে। বৈজ্ঞানিক নীতি দ্বারা বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনসার্থে ব্যবহৃত পন্য, স্বাস্থ্যসেবা, জন কাঠামো, পরিবেশের সুরক্ষা এবং অস্ত্র তৈরির মতো বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে নীতিমালা অনুসরণ করানো হয়।
গণিতকে অনেকে আলাদা শ্রেণী হিসেবে দেখেন। প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞান পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞান, আর গণিত আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান। গণিত পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিজ্ঞানের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন অ্যারিস্টটল, গ্যালিলিও, বেকন, ডেসকার্টেস, নিউটন, ডারউইন, আইনস্টাইন। মুহাম্মদ কুদরাত-ই-খুদা বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতি অভাবনীয়। বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মধ্যে রয়েছে মানব জিনোম প্রকল্প (২০০৩), মধ্যাকর্ষণ তরঙ্গের পর্যবেক্ষণ (২০১৫), হিগস বোসনের আবিষ্কার (২০১৩)। বৈজ্ঞানিক গবেষণার গুণগত মান বৃদ্ধি এবং বর্জ্য কমানোর জন্য মেটাবিজ্ঞানের উত্থান ঘটেছে। বিজ্ঞানকে কখনও কখনও ছদ্মবিজ্ঞান এবং অপবিজ্ঞানের সাথে পার্থক্য করা দরকার।
বিজ্ঞানের দর্শনের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে: বাস্তববাদ, অবাস্তববাদ, আদর্শবাদ, প্রয়োগবাদ, যুক্তিবাদ, তাত্ত্বিক যুক্তিবাদ। বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলি পরীক্ষামূলক এবং নতুন প্রমাণের আলোকে পরিবর্তিত হতে পারে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন গবেষকরা গবেষণার মাধ্যমে স্নাতকোত্তর জ্ঞান অর্জন করেন; তত্ত্বগুলি ভালোভাবে পরীক্ষা এবং যাচাই করা হয়েছে কিনা, সেইসাথে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের দ্বারা তারা স্বীকৃতি পেয়েছে কিনা তার উপর ভিত্তি করে তারা পরিবর্তিত হয় । উদাহরণস্বরূপ, সূর্যকেন্দ্রিক তত্ত্ব, বিবর্তন তত্ত্ব, আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এবং জীবাণু তত্ত্ব এখনও
, তত্ত্ব
নাম বহন করে যদিও প্রথাগতভাবে এটি বাস্তবিক বলে মনে করা হয়।
বৈজ্ঞানিক জার্নাল বিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রচার ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞানের সাথে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলি বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে উৎসাহিত করে। বিজ্ঞান নীতি বৈজ্ঞানিক উদ্যোগকে জনস্বার্থে প্রভাবিত করার জন্য উন্নত করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যা সর্বজনীনভাবে সত্য এবং যাচাইযোগ্য।