১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দুটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন ছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এবং ‘অপারেশন জ্যাকপট’। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি পরিকল্পিত গণহত্যা, যেখানে ২৫ মার্চ রাতে ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে আওয়ামী লীগ নেতা, ছাত্র নেতা এবং বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এই অপারেশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন অসহযোগ আন্দোলন দমন করা। অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী উল্লেখযোগ্য। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট প্রমুখ স্থানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।
অপারেশন জ্যাকপট ছিল মুক্তিবাহিনীর একটি সফল গেরিলা অপারেশন। ১৫ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম, মংলা, চাঁদপুর এবং নারায়ণগঞ্জ বন্দরে একযোগে আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর ২৬টি জাহাজ ও গানবোট ডুবিয়ে দেওয়া হয়। এই অপারেশনের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর রসদ যোগান ব্যবস্থায় ব্যাপক বিঘ্ন ঘটানো হয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বব্যাপী আরো বেশি পরিচিতি লাভ করে। নৌ-কমান্ডোদের এই সফল অপারেশনে সাবমেরিনার আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী, আহসানউল্লাহ, বদিউল আলম, আব্দুর রহমান ও শাহজাহান সিদ্দিক প্রমুখের নেতৃত্ব ছিল। মেজর রফিকুল ইসলাম ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের অভিযানের তত্ত্বাবধায়ক। এই দুটি অপারেশন মুক্তিযুদ্ধের গতিপ্রকৃতি বদলে দেয় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।