বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও মুক্তিসেনানী
১৭ মার্চ ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণকারী শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একজন অসাধারণ নেতা, কূটনীতিজ্ঞ, এবং দেশপ্রেমিক। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তার ছয় দফা দাবি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল, যা পাকিস্তান সরকারের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হলেও, বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্পৃহাকে আরও জোরদার করেছিল।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয়ের পরেও পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী শেখ মুজিবকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায়। এর ফলে, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করে। এই অত্যাচারের প্রতিবাদে এবং বাঙালি জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য শেখ মুজিব ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার আহ্বান জানান এবং ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং শেখ মুজিব মুক্ত হয়ে ১০ই জানুয়ারি ১৯৭২ সালে স্বদেশে ফিরে আসেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন করার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি সংবিধান প্রণয়ন করেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করেন, কৃষিক্ষেত্রে বিপুল অগ্রগতি সাধন করেন। কিন্তু ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একদল সেনা কর্মকর্তা তাকে সপরিবারে হত্যা করে।
শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অন্ধকার দিন। কিন্তু তাঁর আদর্শ ও স্বপ্ন এখনও বাংলাদেশের জনগণের অন্তরে জীবন্ত। তিনি সর্বদা বাঙালি জাতির কাছে “জাতির জনক” হিসেবে স্মরণীয় থাকবেন।