পিলখানা: ঢাকার ঐতিহাসিক স্থানের কাহিনী
ঢাকার পুরনো ঐতিহ্যের ধারক পিলখানা নামটি শুনলেই অনেকের মনে হয়তো ব্রিটিশ আমলের হাতিদের কথা মনে পড়ে। আর সেই কথাই সত্য। পিলখানা নামটি এসেছে ‘পিল’ অর্থাৎ হাতির আস্তাবল থেকে। মুঘল ও ব্রিটিশ আমলে ঢাকার প্রশাসনের অধীনে ‘খেদা’ নামক একটি বিশেষ বিভাগ ছিল যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বন্য হাতি ধরে এনে পিলখানায় পোষ মানাত এবং প্রশিক্ষণ দিত।
এই হাতিগুলোর ব্যবহার ছিল বহুমুখী। ১৮৬০ ও ১৮৭০ এর দশকে পাহাড়ি উপজাতি দমনে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যাতায়াতে, ভাইসরয় বা লেফটেন্যান্ট গভর্নরের আগমনে প্যারেড ও প্রদর্শনীতে, এমনকি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানেও এই হাতিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ঢাকার আশেপাশের জমিদাররাও তাদের ব্যক্তিগত হাতিগুলো পিলখানায় পোষ মানানোর জন্য পাঠাতেন।
১৮৮১ সালে ঢাকার খেদা বিভাগে পিলখানার হাতিদের দেখাশুনার জন্য একজন সুপারিন্টেন্ডেন্ট, একজন হেড এসিস্ট্যান্ট, দুইজন ভেটেরিনারি সার্জন, তিনজন ক্লার্ক, একজন পশু হিসাবকারী এবং বেশ কয়েকজন মাহুত নিযুক্ত ছিল। উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই হাতিগুলোকে রমনা অঞ্চলে চারণের জন্য নিয়ে যাওয়া হতো, যার ফলে রাস্তাঘাটের ক্ষতির অভিযোগ জনগণ কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়মিত জানাতো।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৬৪ সালে মিউনিসিপ্যালিটি প্রতিষ্ঠার পর কর্তৃপক্ষ ঢাকার উত্তরাঞ্চলের প্রান্তিক এলাকা দিয়ে রমনায় যাওয়ার একটি আলাদা রাস্তা তৈরি করে, যার নামকরণ করা হয় “এলিফ্যান্ট রোড”। নিউমার্কেট এলাকা থেকে রমনা পর্যন্ত এলিফ্যান্ট রোড আজও বিদ্যমান। আজকের পিলখানা বিজিবির সদর দপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তবে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অব্যাহত রয়েছে।