সাতগাঁও বাজার

আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭ এএম

শ্রীমঙ্গল উপজেলার দুই নম্বর ভুনবীর ইউনিয়নের মাধবপাশা গ্রামে অবস্থিত সাতগাঁও বাজার, একসময় বাংলাদেশ তথা সিলেট জুড়ে যাতায়াত ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম ছিল নৌপথ। সাতগাঁও অঞ্চলের নৌঘাট ছিল মতিগঞ্জ বিলাস নদীর তীরে ফুলছড়ি ঘাট। তখন বিলাস নদীর গভীরতা ছিল অনেক। জাহাজ, লঞ্চ, নৌকা চলাচল করত কলকাতা পর্যন্ত বিলাস নদী দিয়ে। ব্রিটিশ সরকার সহজ আধুনিক যাতায়াতের জন্য সিলেট জুড়ে রেল লাইন নির্মাণ করেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলায় দুটি রেল স্টেশন তৈরী হয় শ্রীমঙ্গল আর সাতগাঁও রেল স্টেশন। সাতগাঁও রেল স্টেশনের প্রয়োজনীয়তা ছিল সাতগাঁও অঞ্চলের মির্জাপুর চা বাগান, সাতগাঁও, আমরাইল ছড়া, গান্ধী ছড়া, হুগলিয়া ছড়, মাকরিয়া ছড়া চা বাগানে উৎপাদিত চা পাতা চট্টগ্রামে প্রেরণের জন্য।

সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেল চলাচল শুরু হয়। চা পাতা গুদামজাত করার জন্য ব্রিটিশ সরকার শুধু চা পাতার জন্য মির্জাপুর চা গুদাম নির্মাণ করেছিল। কয়েক বছর আগে সাতগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের সেই গুদাম ঘরটির অব্যবহৃত থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে গেছে এখন আর অবশিষ্ট নাই। যেহেতু সড়ক পথ উন্নত ছিল না তাই সাতগাঁও অঞ্চলের মানুষ ট্রেনে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতেন। এখন সাতগাঁও রেল স্টেশনের সেই জুলুস আর নাই। সাতগাঁও রেলওয়ে স্টেশনটি কোন রকম ঠিকে আছে। রেল পথ ঘিরে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সাতগাঁও পোস্ট অফিসের।

মতিগঞ্জ বিলাস নদীর পাড়ে মতিগঞ্জ বাজার প্রবল ভূমিকম্পে বিলীন হলে বাজার চলে আসে সাতগাঁও রেলস্টেশনের পাশে। বাজারটি শ্রীমঙ্গল বাজারের কাছাকাছি হওয়ায় যতটা বর্ধিত হওয়ার দরকার ছিল তা হয়নি। সাতগাঁও বাজারটি সপ্তাহের প্রতিদিনই হাট বসে। এখানে সবকিছু পাওয়া যায়। রয়েছে মাছ বাজার, সবজি বাজার, পান বাজার, চাল বাজার, লাকড়ির বাজার, শুটকির বাজার, জুতা সেলাইয়ের মুচি বাজার। কয়েক শত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রাস্তার দুই পাশে গড়ে উঠেছে। আছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের শাখা ও কয়েকটি এনজিও অফিস। ছোট বাজার হলেও রয়েছে অসংখ্য ওষুধের দোকান ফার্মেসি। এক সময় বাজারের বিখ্যাত পল্লী চিকিৎসক ছিলেন ডাক্তার জিতেন্দ্র শর্মা, ডাক্তার ধীরেন্দ্র দেব, ডাক্তার বিজয় দেব, ডাক্তার আবুল বাশার, ডাক্তার সুফী, ডাক্তার জলিল, ডাক্তার সিরাজ, ডাক্তার ওহাব খান প্রমুখ।

বাজারের প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী ছিলেন ধীগেন্দ্র বাবু, মনহর হাজী, ক্ষীতেশ সরকার, কাজী ফুল মিয়ার রেস্টুরেন্ট, লাল মিয়ার চায়ের দোকান, সুকুমারের চায়ের দোকান, মনিলাল হালইর জিলাফির দোকান। বাজারে রয়েছে চারটি মসজিদ সাতগাঁও বাজার জামে মসজিদ ও রেলওয়ে জামে মসজিদ, সামাদিয়া মাদ্রাসা জামে মসজিদ ও নতুন বাজার জামে মসজিদ। বাজারের শেষ প্রান্ত শ্রীমঙ্গল রোডে হাজী আব্দুস সামাদ প্রতিষ্ঠিত সামাদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ও মসজিদ যা বাজারের গুরুত্ব বাড়িয়েছে অনেক গুণ। বাজার জামে মসজিদের পাশে গড়ে উঠেছে সাতগাঁও বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নতুন বাজার মাধবপাশা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাজারের চাল হাঁটার পিছনে ছিল বিরাট এক বড় পুকুর, যেখানে বিভিন্ন সময়ে সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত। বাজারের পাশে নতুন বাজারে আছে ফুটবলের বিরাট মাঠ। বিকাল বেলা প্রতিদিন মাঠে খেলাধূলা হত। বাজার ঘিরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পিপলস স্পোটিং ক্লাব, রেলস্টেশনের পাশে ছিল অফিস ঘর। ক্লাবের উদ্যোগে বিভিন্ন সময় নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল অনেক দিন ধরে। পালন হত জাতীয় দিবস ও বৈশাখী মেলার। আর ওসমানী স্পোটিং ক্লাব। ক্লাবের অনেক সদস্য ব্যক্তি জীবনে জীবিকার থাকিতে চাকুরী বা বিদেশ চলে গেলে পিপলস ক্লাবের ইতি ঘটে। বাজারের ব্যবসায়ীদের নিয়ে ছিল বাজার সমবায় সমিতি এখন আর তার কোন অস্তিত্ব নাই।

মূল তথ্যাবলী:

  • শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নে অবস্থিত
  • চা বাগান ও রেলপথের সাথে সম্পর্কিত
  • ঐতিহাসিক মতিগঞ্জ বাজারের স্থানান্তরিত রূপ
  • প্রতিদিন হাট বসে
  • স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।

গণমাধ্যমে - সাতগাঁও বাজার

সাতগাঁও বাজার শ্রীমঙ্গল উপজেলার দুই নম্বর ভুনবীর ইউনিয়নের মাধবপাশা গ্রামে অবস্থিত।