রাজনীতি: ক্ষমতা, নীতি ও সমাজের গতিধারা
রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, বা রাজগতি – এই শব্দগুলি ক্ষমতার সম্পর্ক, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সম্পদের বণ্টনকে বোঝায়। এটি একাডেমিকভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নামে পরিচিত। রাজনীতির সংজ্ঞা বহুমুখী; এটি ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। আপোষ, অহিংস সমাধান থেকে শুরু করে ক্ষমতা দখল, যুদ্ধ-লড়াই পর্যন্ত এর বিস্তৃতি বিশাল। ঐতিহ্যবাহী সমাজ থেকে আধুনিক রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর প্রভাব বিদ্যমান।
রাজনীতির ইতিহাস প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান। প্লেটো, এরিস্টটল, চাণক্য, কনফুসিয়াসের লেখাগুলিতে রাজনৈতিক চিন্তার প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। ইংরেজি ‘পলিটিক্স’ শব্দটি এসেছে এরিস্টটলের ‘পলিটিকা’ থেকে। আরবি ‘সিয়াসাত’ শব্দের অর্থ পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা। বিভিন্ন চিন্তাবিদ রাজনীতিকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন; হ্যারোল্ড ল্যাজওয়েলের মতে, রাজনীতি হলো “যে যা, যখন, যেভাবে পায় সেটাই”; ডেভিড ইস্টনের মতে, “এটি হলো কোন সমাজের জন্য মূল্যবান বিষয়গুলোর কর্তৃত্বপূর্ণ সুষম বণ্টন”; লেনিনের মতে, “রাজনীতি হলো অর্থনীতির সবচেয়ে ঘণীভূত বহিঃপ্রকাশ।”
রাজনৈতিক ব্যবস্থা কোন সমাজের গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক পদ্ধতি সংজ্ঞায়িত করে। রাষ্ট্র, সরকার, সংবিধান, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, গণতন্ত্র, বামপন্থী রাজনীতি, ডানপন্থী রাজনীতি, রক্ষণশীলতাবাদ, উদারপন্থী মতবাদ – এসব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিশ্ব রাজনীতি বিশ্বের রাজনৈতিক ঘটনাবলীর একটি বিশ্বব্যাপী চিত্র উপস্থাপন করে। আন্তঃসংযুক্ততা ও আন্তঃনির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পেলেও, বাস্তববাদ ও উদারপন্থীবাদ সহ বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান।
ছাত্র রাজনীতি: উনিশ শতকের গোড়ার দিকে বাংলার রাজনীতিতে ছাত্রদের অংশগ্রহণ শুরু হয়। বিশ শতকের প্রথম দিকে স্বদেশী আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন ও বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিখিল বঙ্গ ছাত্র সমিতি (১৯২৮) ও নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্র সমিতি (১৯৩২) গঠিত হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের ভূমিকা অসাধারণ। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ (১৯৬৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাম রাজনীতি: বিশ শতকের বিশের দশকে এই উপমহাদেশে বাম রাজনীতির উত্থান ঘটে। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (১৯২০), পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (১৯৪৮) গঠিত হয়। তেভাগা আন্দোলন, নকশালবাড়ী আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
দেশবিভাগের রাজনীতি: ১৯০৫ ও ১৯৪৭ সালে বাংলার দুটি বিভাগ উপনিবেশিক ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ফল। এই বিভাগের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদ, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক, কংগ্রেস, মুসলিম লীগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
সংবাদপত্র ও রাজনীতি: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকাল থেকেই সংবাদপত্র রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে। রাজা রামমোহন রায়, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমুখ ব্যক্তিদের প্রকাশিত পত্রিকাগুলো রাজনৈতিক চিন্তার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বদেশী আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ – প্রতিটি ঘটনায় সংবাদপত্রের ভূমিকা লক্ষণীয়।