ব্যাংক: বাংলাদেশের অর্থনীতির এক অপরিহার্য অঙ্গ
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা অপরিসীম। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ সঞ্চয়, ঋণ প্রদান, আর্থিক লেনদেন সহ নানা আর্থিক সেবায় ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই লেখায় আমরা বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা, এর ইতিহাস, বিভিন্ন ধরণের ব্যাংক এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করব।
প্রাচীনকাল থেকে ব্যাংকিং এর ইতিহাস:
আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার উৎপত্তি মধ্যযুগে ইউরোপে। প্রাচীন সভ্যতায়ও অর্থ লেনদেনের কিছু পদ্ধতি ছিল, যা ব্যাংকের আদি রূপ বলে মনে করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতা থেকে শুরু করে প্রাচীন গ্রীক, রোমান, ব্যাবিলন ও চীন সভ্যতায় ব্যাংকিং এর ইতিহাসের সন্ধান মেলে। বিশ্বের প্রথম সংগঠিত ব্যাংক, 'ব্যাংক অব ভেনিস' প্রতিষ্ঠিত হয় ১১৫৭ সালে। পরবর্তীতে ১৬৯৪ সালে ইংল্যান্ডে বিশ্বের প্রথম আধুনিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক 'ব্যাংক অব ইংল্যান্ড' প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থা:
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংক দেশের মুদ্রানীতি নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করে। দেশে বহু বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে, যেমন গ্রামীণ ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, ইত্যাদি। প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব নীতি ও কার্যক্রম রয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক:
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরণের ব্যাংক রয়েছে: বাণিজ্যিক ব্যাংক, ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক (যেমন কর্মসংস্থান ব্যাংক) ইত্যাদি।
ব্যাংকের ভূমিকা ও চ্যালেঞ্জ:
ব্যাংক ব্যবস্থা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ঋণ খেলাপি, প্রযুক্তিগত ঝুঁকি, জালিয়াতি, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা সহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও হতে হয়। ব্যাংকিং খাতের নিরাপত্তা ও গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক অগ্রগতি:
ব্যাংকিং সেবায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, এটিএম সেবা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ইত্যাদি ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকিং এ বেশ উন্নত কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
উপসংহার:
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা এবং সরকারের নীতি এই খাতের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। স্থিতিশীলতা, সুরক্ষা এবং গ্রাহক সেবার মান উন্নত রাখাই গুরুত্বপূর্ণ।