ঋণ

ঋণঃ অর্থায়নের এক অপরিহার্য অঙ্গ

অর্থনীতির ভাষায় ঋণ (ইংরেজি: Loan) হলো একধরনের আর্থিক লেনদেন যেখানে এক পক্ষ (ঋণদাতা) অন্য পক্ষকে (ঋণগ্রহীতা) নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ধার দেয়, যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সুদসহ ফেরত দিতে হয়। ঋণের মাধ্যমে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্র বিভিন্ন উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে।

  • *ঋণের প্রকারভেদ:**

ঋণকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা যায়, যেমন:

  • **সুরক্ষিত ঋণ (Secured Loan):** এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা ঋণের বিপরীতে কোন জামানত রাখে, যেমন জমি, বাড়ি, গাড়ি। বন্ধকী ঋণ এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
  • **অসুরক্ষিত ঋণ (Unsecured Loan):** এ ধরনের ঋণ কোন জামানত ছাড়াই প্রদান করা হয়। ব্যক্তিগত গ্যারান্টির উপর নির্ভর করে। ক্রেডিট কার্ড ঋণ এর একটা উদাহরণ।
  • **ডিমান্ড ঋণ (Demand Loan):** এ ধরনের ঋণের কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে না, ঋণদাতা যখন ইচ্ছা তখন পরিশোধের দাবি করতে পারে।
  • **ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan):** সাধারণ ব্যক্তিদের জন্য প্রদত্ত ঋণ।
  • **বাণিজ্যিক ঋণ (Commercial Loan):** ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রদত্ত ঋণ।
  • **কৃষি ঋণ (Agricultural Loan):** কৃষিকাজের জন্য প্রদত্ত ঋণ।
  • *ঋণ পরিশোধ:**

ঋণ সাধারণত কিস্তিতে পরিশোধ করা হয়, অ্যামোর্টাইজেশন পদ্ধতি এর জন্য বহুল ব্যবহৃত। ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণদাতা জামানত বিক্রি করে বা আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে।

  • *বাংলাদেশে ঋণের ইতিহাস:**

বাংলাদেশে ঋণের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। প্রাচীনকাল থেকেই অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ব্যবস্থা চালু ছিল। মহাজন, স্বর্ণকার, বণিক প্রভৃতি ঋণ দানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। মুগল আমলে ঋণ ব্যবস্থা আরও সুসংহত হয়। ১৭০০ সালে কলকাতায় হিন্দুস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ব্যবস্থার সূচনা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঋণ ব্যবস্থা আরও বিকশিত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংক, এনজিও, মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ পাওয়া যায়।

  • *ঋণের গুরুত্ব:**

ঋণ অর্থনীতির এক অপরিহার্য অঙ্গ। ঋণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন করা সম্ভব। তবে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত ঋণ ঋণগ্রহীতার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

  • *শেষ কথা:**

ঋণ ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিচালনা করলে এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সুদ, ঋণের মেয়াদ, এবং ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধ ক্ষমতা বিবেচনা করে সাবধানতার সাথে ঋণ গ্রহণ করা উচিত।

মূল তথ্যাবলী:

  • ঋণ হলো এক পক্ষ থেকে অন্য পক্ষে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থ ধার দেওয়া।
  • ঋণ সুরক্ষিত ও অসুরক্ষিত, ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক, কৃষি ও অন্যান্য প্রকারভেদে বিভক্ত।
  • ঋণের মেয়াদ ও সুদের হার ঋণ চুক্তিতে উল্লেখ থাকে।
  • বাংলাদেশে প্রাচীনকাল থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ব্যবস্থা বিদ্যমান।
  • প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ ব্যবস্থা ব্যাংক, এনজিও ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত।

গণমাধ্যমে - ঋণ

বাংলাদেশ ৬০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছে।