বঙ্গোপসাগর: বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর
বঙ্গোপসাগর ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশে অবস্থিত একটি বিশাল উপসাগর, যা এর বিশাল আয়তন ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। প্রায় ত্রিভুজাকার এই উপসাগর পশ্চিমে ভারত ও শ্রীলঙ্কা, উত্তরে ভারত ও বাংলাদেশ এবং পূর্বে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড দ্বারা আবদ্ধ। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এর কেন্দ্রে অবস্থিত। ২১,৭২,০০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপসাগরে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, ইরাবতী, গোদাবরী, মহানদী, কৃষ্ণা, কাবেরী প্রভৃতি বৃহৎ নদী মিশেছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে বঙ্গোপসাগরকে ‘মহোদধি’ বলা হতো। প্রাচীন মানচিত্রে এটি ‘সাইনাস গ্যাঞ্জেটিকাস’ নামেও পরিচিত ছিল। বঙ্গোপসাগরের তীরে চট্টগ্রাম, কলকাতা, চেন্নাই, ইয়াঙ্গুন, পায়রা, মংলা, কক্সবাজার প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর অবস্থিত। বিখ্যাত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এই উপসাগরের তীরে বাংলাদেশে অবস্থিত।
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য:
বঙ্গোপসাগরের গভীরতা ও তলদেশীয় ভূ-প্রকৃতি বিভিন্ন। সোয়াচ অফ নো গ্রাউন্ড নামক একটি গভীর সমুদ্রের উপত্যকা এখানে অবস্থিত, যা বিশ্বের বৃহত্তম সাবমেরিন পাখার অংশ। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, মার্গুই দ্বীপপুঞ্জ, এবং চিদুবা দ্বীপপুঞ্জ উপসাগরে অবস্থিত।
জীববৈচিত্র্য:
বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য অপরিসীম। প্রবাল, ম্যানগ্রোভ বন, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, চিংড়ি, কচ্ছপ, তিমি, ডলফিন, সামুদ্রিক সাপ ইত্যাদি এখানে বসবাস করে। সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বন, বিশ্বের বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনগুলির একটি, বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় দেশগুলির অর্থনীতিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৎস্য আহরণ, সমুদ্র পরিবহন, পর্যটন, খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান ইত্যাদি এখানে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কার্যকলাপ। তবে তেল ও গ্যাসের খনিজ সম্পদ নিয়ে এখানে মাঝেমধ্যে আঞ্চলিক বিরোধ দেখা দেয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ:
বঙ্গোপসাগর ঘূর্ণিঝড়ের জন্য বিখ্যাত। ১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড় এর একটি ভয়াবহ উদাহরণ। এই ঘূর্ণিঝড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।
ভবিষ্যৎ:
বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সঠিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমুদ্রসীমা বিরোধ সমাধান ও সমুদ্র দূষণ রোধ গুরুত্বপূর্ণ।