তথ্য প্রচার

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৪:৩৬ এএম

বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার: একটি বিশ্লেষণ

তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে, দুর্ভাগ্যবশত, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচারের ঘটনা বেশ ঘটেছে। রিউমর স্ক্যানারের মতে, ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশের ১৬৪ টি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন যাচাই করে ৭৮টি ভুল তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন শনাক্ত করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনগুলোতে মিথ্যা তথ্যের হার ৫২% এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের হার ৪৫% ছিল।

ভুল তথ্যের ধরণ:

রিউমর স্ক্যানারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ভুল তথ্যের ধরণ বিভিন্ন ছিলো। মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর এবং বিকৃত তথ্য সহ সকল ধরণের ভুল তথ্যই শনাক্ত করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে জাতীয় বিষয়ক প্রতিবেদনে, এরপরে আন্তর্জাতিক বিষয়। খেলাধুলা, ধর্মীয় বিষয়, রাজনীতি, বিনোদন, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, পরিবেশ ও জলবায়ু, স্বাস্থ্য এবং প্রতারণা বিষয়েও ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।

প্রধান অপরাধী:

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ‘কালবেলা’ নামক দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম ২০টি ভুল তথ্য প্রচারের জন্য প্রথম স্থানে রয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এবং বিবিসি বাংলা তালিকায় রয়েছে। অন্যদিকে, দ্য ডেইলি স্টার, ডয়চে ভেলে বাংলা, ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা, বাংলা ট্রিবিউন, নিউ এজের মতো মূল ধারার গণমাধ্যমের কোন ভুল তথ্য শনাক্ত হয়নি।

ভুল তথ্যের উৎস:

তথ্যের উৎস বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভুল তথ্যের জন্য বেসরকারি এবং সরকারি উভয় প্রকার গণমাধ্যমই দায়ী। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও এ থেকে মুক্ত নয়।

উল্লেখযোগ্য ঘটনা:

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক গুজব ছড়িয়ে পড়েছে গণমাধ্যমে। অযোধ্যার রাম মন্দির উদ্বোধন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৪, এবং রাসেলের ভাইপার ইস্যুতেও ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

প্রভাব:

ভুল তথ্য প্রচারের ফলে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়, এবং মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতায় ক্ষতি হয়। গণমাধ্যমের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার পাশাপাশি, ভুল তথ্যের শিকার ব্যক্তিরা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে।

উন্নতিতে উদ্যোগ:

রিউমর স্ক্যানারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষ ছয় মাসের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচারের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এই উন্নতির জন্য সংবাদ প্রকাশের পূর্বে সূত্র যাচাই ও ক্রসচেক করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

আগামী পথ:

গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি, তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালীকরণ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাগুলির সাথে সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরী। তথ্য সাক্ষরতা এবং গণমাধ্যম সাক্ষরতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমেও এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

মূল তথ্যাবলী:

  • ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে ৭৮টি ভুল তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন শনাক্ত
  • কালবেলা সর্বাধিক ভুল তথ্য প্রচারে প্রথম স্থানে
  • মিথ্যা তথ্যের হার ৫২%, বিভ্রান্তিকর তথ্যের হার ৪৫%
  • জাতীয় বিষয়ে সর্বাধিক ভুল তথ্য প্রচার
  • ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ভুল তথ্য প্রচারের হার উল্লেখযোগ্য হ্রাস

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।