জরিপ

বাংলাদেশে জরিপের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা:

জরিপ, ভূমির পরিমাপ ও মানচিত্রায়ণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, বাংলাদেশের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। রাজস্ব আদায় থেকে শুরু করে ভূতাত্ত্বিক ও মৃত্তিকা সম্পদের অধ্যয়ন, সকল ক্ষেত্রেই জরিপের ভূমিকা অপরিসীম।

শেরশাহ সুলতানের আমলেই ভারতবর্ষে ভূমি জরিপের গুরুত্ব বেড়ে যায়। তোডর মলের রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় জমির সঠিক পরিমাপ ও কর নির্ধারণের প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। ব্রিটিশ আমলে রাজস্ব আদায়ের জন্য বিভিন্ন জরিপ কার্যক্রম চালানো হয়, যেমন: থাকবস্ত জরিপ (১৮৪৫-১৮৭৭), রাজস্ব জরিপ (১৮৪৬-১৮৭৮), খসড়া জরিপ (১৮৪৬-১৮৫৪), দিয়ারা জরিপ (১৮৬২-১৮৮৩), এবং ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ। এসব জরিপে গ্রাম, মৌজা, পরগণা ইত্যাদি প্রশাসনিক একক হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

উনিশ শতকের শেষভাগে এবং বিংশ শতকে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন, ১৮৮৫ অনুযায়ী জমিদার ও রায়তের অধিকার নির্ণয়ের জন্য জরিপ ও বন্দোবস্ত কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৫০ সালের পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ আইনের পর জরিপের ধরণে পরিবর্তন আসে।

আধুনিক যুগে, বিমান জরিপ ও রিমোট সেন্সিং-এর মাধ্যমে জরিপের কার্যক্রম আরও উন্নত ও দ্রুততর হয়েছে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) দেশের ভূ-পৃষ্ঠ ও ভূগর্ভের সম্পদ সম্পর্কে জরিপ ও গবেষণা করে। মৃত্তিকা জরিপ কৃষিক্ষেত্রে উন্নত ফলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

বর্তমানে, ভূমি রাজস্ব, পরিকল্পনা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন সহ নানা ক্ষেত্রে জরিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে জরিপের পদ্ধতিও উন্নত ও আধুনিক হচ্ছে।

মূল তথ্যাবলী:

  • শেরশাহ ও তোডর মলের আমলে ভূমি জরিপের গুরুত্ব বৃদ্ধি
  • ব্রিটিশ আমলে রাজস্ব আদায়ের জন্য বিভিন্ন জরিপ
  • ১৮৮৫ সালের প্রজাস্বত্ব আইন ও জরিপ
  • ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ আইন ও জরিপের পরিবর্তন
  • আধুনিক বিমান ও উপগ্রহভিত্তিক জরিপ