বাংলাদেশে চালের বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই অস্থিরতার পেছনে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে মিলার, ধান-চাল মজুদদার, পাইকার, ও বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের। এই সিন্ডিকেট মুনাফার লোভে চাল মজুদ করে, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এবং দাম বৃদ্ধি করে। সরকারের নানা ইতিবাচক উদ্যোগ সত্ত্বেও, এই সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে না।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাজারে চালের কোন অভাব নেই। তবে মিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। মধ্যবিত্তদের বেশি চাহিদা থাকা বিআর-২৮ ও পাইজাম জাতীয় চালের দাম বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকার বাজারে গতকাল খুচরা পর্যায়ে এ চালের কেজি ৫৮-৬৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে মোটা ও চিকন চালের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসেবে গত এক মাসে সরু চালের দর ৪ শতাংশ, মাঝারি চালের ৮ শতাংশ এবং মোটা চালের দর ২ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরে সব ধরণের চালের দাম বেড়েছে গড়ে ১২ শতাংশ।
চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু শুল্ক প্রত্যাহারের পরও আমদানি বাড়েনি। চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ৯৫৭ টন চাল আমদানি হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বর্তমানে চালের মজুদ রয়েছে ৯ লাখ ৬৮ হাজার টন। সরকারের নিরাপত্তা মজুদ ১১ লাখ টন হওয়ার কথা। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার বাজার থেকে ধান ও চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কিছু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মতে, ধানের দাম বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতে উৎপাদন কম হবে, এই আশঙ্কার কারণে চালের দাম বাড়ছে। অন্যরা বলছেন, চালের বাজারে সক্রিয় সিন্ডিকেটই এর জন্য দায়ী। ঢাকায় চালের বড় পাইকারি বিক্রয়কেন্দ্র মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বাবু বাজার, যাত্রাবাড়ী কলাপট্টি, জুরাইন, কচুক্ষেত, মিরপুর-১, ১০, ১১, গাজীপুরের টঙ্গী বাজার, সাভারের নামা বাজার, নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ, চট্টগ্রাম রোড, চট্টগ্রামের চাকতাই এবং পাহাড়তলী উল্লেখযোগ্য। মিলার, মজুদদার ও পাইকার এবং বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানি কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান-চাল কিনে গুদামজাত করে এবং সুবিধামত সময়ে বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে বলে অভিযোগ। বাজারে কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের লাগাম টানতে পারলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন অনেকে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে চালের দামের অস্থিরতা কখন কমবে তার সঠিক কোনো ধারণা দেওয়া সম্ভব নয়।