চর: বাংলাদেশের নদী ও জলাভূমির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল চর। নদীর পলি জমে, নদীভাঙনে, এবং জলাবদ্ধ এলাকায় পানি শুকিয়ে গেলে চরের সৃষ্টি হয়। এটি সাধারণত নদী, মহাসাগর, বা হ্রদের পাশে অবস্থিত ক্ষুদ্র বা বৃহৎ স্থলভাগ। চরের গঠন, বিকাশ এবং অবক্ষয় নদীর প্রবাহের গতি, পলি পরিমাণ এবং ভূ-প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী যেমন যমুনা, গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা, তিস্তা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতিতে চর দেখা যায়। চরের মাটি সাধারণত উর্বর হলেও বন্যা ও ভাঙনের আশঙ্কা থাকে। চরের উপর জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং কৃষিকাজের কারণে চর গুরুত্বপূর্ণ। তবে, ভূমি ক্ষয়, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ চরের অস্তিত্ব এবং অধিবাসীদের জীবিকার জন্য বিরাট হুমকি সৃষ্টি করে। বিভিন্ন গবেষণা ও পরিসংখ্যান চরের গঠন, অবস্থা ও বিকাশের ওপর আলোকপাত করে। ইসপান (Irrigation Support Project for Asia and the Near East) এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাও এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এর তথ্য অনুযায়ী ১৯৯৭ সালে নদীর ভাটি অঞ্চলে সৃষ্ট চরগুলির মাটি অধিক উর্বর ছিল। বিভিন্ন সময়ে যমুনা, গঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা নদীতে চরের বিকাশ ও অবক্ষয়ের বিশ্লেষণ উপগ্রহের ছবির মাধ্যমে করা হয়েছে। ১৯৭৩ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকার ৯৯ শতাংশেরও বেশি ভূমি ছিল চর, এবং এর প্রায় ৭৫% এক থেকে নয় বছরের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৩ সালের মধ্যে আপার মেঘনা ব্যতীত অন্যান্য নদীতে চর এলাকার প্রবর্ধন হয়েছে। নদী ভাঙন ও ভাঙনের ফলে অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়েছে। চরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও চরের কৃষিকাজ এবং মৎস্যচাষের ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চর সম্পর্কে আরও গবেষণা এবং পরিকল্পনার মাধ্যমে চরের জনগোষ্ঠীর জীবিকা রক্ষা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরী। চরের উপর নদীভাঙন, বন্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়।
চর
মূল তথ্যাবলী:
- চর হলো নদী, মহাসাগর বা হ্রদের পাশে অবস্থিত স্থলভাগ।
- নদীর পলি জমে চরের সৃষ্টি হয়।
- বাংলাদেশের বহু নদীতে চর দেখা যায়।
- চরের মাটি উর্বর কিন্তু বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি আছে।
- চরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং কৃষিকাজ অব্যাহত আছে।
- চরের সুরক্ষা ও অধিবাসীদের জীবিকার জন্য গবেষণা ও পরিকল্পনা প্রয়োজন।