হ্রদ: প্রকৃতির অপূর্ব স্থাপত্য
পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হ্রদগুলো প্রকৃতির এক অপূর্ব স্থাপত্য। শুষ্ক ভূমি দ্বারা বেষ্টিত, অপেক্ষাকৃত বৃহৎ জলরাশি হিসেবে হ্রদগুলো আমাদের জীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। হিমবাহের কারণে, ভূমিধ্বসের ফলে, অগ্ন্যুৎপাতের পর, নদীর গতিপথের পরিবর্তনের ফলে, বা অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক কারণে হ্রদ সৃষ্টি হয়। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক হ্রদ কানাডায় অবস্থিত।
হ্রদের বৈশিষ্ট্য:
- হ্রদ সাধারণত আন্তঃপ্রবাহ বা বহিঃপ্রবাহের তুলনায় ধীর গতিশীল প্রবাহযুক্ত।
- লবণাক্ত বা মিঠা পানির হ্রদ বিদ্যমান।
- বৃষ্টিপাত ও নদী হ্রদের জলের মূল উৎস।
- বাষ্পীভবন, পানির উচ্চতা ও দ্রবীভূত উপাদানের ঘনত্ব হ্রদের শ্রেণিবিভাগে ভূমিকা পালন করে।
- উচ্চ অক্ষাংশের পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের কারণে অধিক হ্রদ দেখা যায়।
বিভিন্ন ধরণের হ্রদ:
বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ার ফলে হ্রদগুলির বৈচিত্র্য দেখা যায়। যেমন-
- অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ (Oxbow Lake): নদীর বাঁকে সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের প্লাবনভূমি এলাকায় এ ধরণের হ্রদ প্রচুর।
- বগাকাইন হ্রদ (Bagakain Lake): বান্দরবানের একমাত্র প্রাকৃতিক হ্রদ। উল্কা পতন বা মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের ফলে সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
- হিমবাহকৃত হ্রদ: উচ্চ অক্ষাংশের পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের কারণে সৃষ্টি।
- আগ্নেয়গিরি হ্রদ: আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে সৃষ্টি।
হ্রদের গুরুত্ব:
হ্রদগুলো আমাদের জীবনে বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলো মাছ ও খনিজ সম্পদের উৎস, পর্যটন কেন্দ্র, বন্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কিছু বিখ্যাত হ্রদ:
- কাস্পিয়ান সাগর: বিশ্বের বৃহত্তম হ্রদ।
- সুপিরিয়র হ্রদ: বিশ্বের বৃহত্তম হ্রদগুলির মধ্যে একটি।
- ভিক্টোরিয়া হ্রদ: বিশ্বের বৃহত্তম হ্রদগুলির মধ্যে একটি।
- মৃত সাগর: বিশ্বের নিম্নতম হ্রদ।
- বৈকাল হ্রদ: বিশ্বের গভীরতম মিঠাপানির হ্রদ।
হ্রদের সংরক্ষণ:
দূষণ, অতিমাত্রায় জল ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তন হ্রদের জন্য বড় ধরণের হুমকি। সুতরাং হ্রদ সংরক্ষণ ও সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরী।