উপকূলীয় এলাকা

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১:৩৩ এএম

উপকূলীয় এলাকা: ভূগোল, অর্থনীতি ও ঝুঁকি

বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ভৌগোলিক অঞ্চল। এটি বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী, প্রায় ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি অঞ্চল যা দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ ও জনজীবনের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। উপকূলীয় অঞ্চল বলতে আমরা বুঝি সেই এলাকা যেখানে স্থলভাগ সমুদ্রের সাথে মিলিত হয়। এই এলাকায় বসবাসকারী মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল মৎস্যচাষ, লবণ উৎপাদন, নৌপরিবহন, পর্যটন এবং কৃষিকাজের উপর। এই অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি অত্যন্ত নিরান্তর পরিবর্তনশীল; জোয়ার-ভাটা, নদী ভাঙ্গন, সাইক্লোন এবং জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব এখানে অত্যন্ত গভীর।

ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য: উপকূলীয় অঞ্চলটি বিভিন্ন ধরনের ভূ-প্রকৃতির সমন্বয়ে গঠিত যেমন সমুদ্র সৈকত, খাল-বিল, ম্যানগ্রোভ বন এবং চর। সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ বন, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। উপকূলীয় এলাকায় জোয়ার-ভাটার প্রভাব অত্যন্ত গভীর। জোয়ারের সময় অনেক এলাকা পানিতে ডুবে যায় আর ভাটার সময় শুকিয়ে যায়।

অর্থনৈতিক কার্যকলাপ: উপকূলীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বিভিন্ন ধরণের। মৎস্য ও চিংড়ি চাষ এই অঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক উৎস। লবণ উৎপাদন, নারিকেল চাষ এবং কাঠ সংগ্রহ ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি, পর্যটন শিল্প ও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা এবং সুন্দরবনের মতো স্থান পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

ৠতিহাসিক ঘটনা: উপকূলীয় অঞ্চলের ৠতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন যুগে এই অঞ্চল ব্যবসা, যুদ্ধ এবং সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল। সুন্দরবন এলাকা রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস এই অঞ্চলের জনজীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

জনসংখ্যা ও জনগোষ্ঠী: উপকূলীয় অঞ্চলের জনসংখ্যা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী বসবাস করে, যারা বিভিন্ন জীবিকা নির্ভর করে মৎস্য চাষ, লবণ উৎপাদন, কৃষিকাজ ইত্যাদি কর্মের উপর।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ: উপকূলীয় এলাকা ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙ্গন এবং সমুদ্র উত্থানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশী ভোগে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ঝুঁকি আরও বেড়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় ক্ষয় ও জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সংরক্ষণ ও উন্নয়ন: উপকূলীয় এলাকার সংরক্ষণ এবং সমন্বিত উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার, দুর্যোগ পরিচালনা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। উপকূলীয় বনায়ন, ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষণ এবং নদী ভাঙ্গন রোধ এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই অঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন সম্ভব।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল প্রায় ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ।
  • মৎস্য ও চিংড়ি চাষ, লবণ উৎপাদন, নৌপরিবহন ও পর্যটন এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ।
  • জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙ্গন ও সাইক্লোন উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য বড় ঝুঁকি।
  • সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
  • জলবায়ু পরিবর্তন উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।