ঝালকাঠি: দক্ষিণাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী শহর ও নদীবন্দর
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ঝালকাঠি শুধুমাত্র একটি শহর নয়, এটি একটি ঐতিহ্যের ধারক, নদীর সৌন্দর্যের আধার এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত ঝালকাঠি জেলার সদর দপ্তর এই শহরটি সুগন্ধা নদীর উত্তর তীরে অবস্থিত। গাবখান খাল ও ধানসিঁড়ি নদী এর পূর্ব সীমানা। প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য পরিচিত এ শহরটি বর্তমানে পেয়ারা ও শীতল পাটির জন্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
১৮৭৫ সালে ব্রিটিশ সরকার ঝালকাঠি পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করে। ১৯০০ সালে এটি থানা সদর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠি পূর্ণাঙ্গ জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে শহরটি জেলা শহরের মর্যাদা পায়। ঝালকাঠির অবস্থান ২২°৩৮′২৭″ উত্তর ৯০°১১′৫৬″ পূর্ব। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ১১ মিটার। ঢাকা থেকে ১৯৫ কিমি দক্ষিণে এবং বরিশাল থেকে ২০ কিমি পশ্চিমে অবস্থিত এ শহরটি সুগন্ধা নদী দ্বারা দু'ভাগে বিভক্ত।
জনসংখ্যা ও প্রশাসন:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ঝালকাঠি শহরের জনসংখ্যা ৫৪,৯০৪ জন। ৯টি ওয়ার্ড ও ৪৭টি মহল্লায় বিভক্ত ঝালকাঠি পৌরসভা ‘ক’ শ্রেণীর পৌরসভা। ১৮.৪০ বর্গ কিমি আয়তনের এ শহরের ১৬.১৩ কিমি পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত।
অর্থনীতি ও পরিবহন:
ঝালকাঠির অর্থনীতি প্রধানত কৃষি, ব্যবসা ও পেয়ারা চাষের উপর নির্ভরশীল। পেয়ারা বাগান এবং শীতল পাটি শহরের পরিচয়। গাবখান ব্রীজ খুলনা-বরিশাল মহাসড়কের সাথে ঝালকাঠিকে সংযুক্ত করেছে। রিকশা, বাস, ইজিবাইক শহরের প্রধান পরিবহন মাধ্যম।
উল্লেখযোগ্য স্থান ও ব্যক্তিত্ব:
শহরের পশ্চিম প্রান্তে গাবখান ব্রীজ । ঝালকাঠি পৌরসভা কর্তৃক নির্মিত পৌর মিনিপার্ক শহরবাসীর প্রমোদস্থান। এখানেই অবস্থিত শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হকের মাতা সৈয়দুন্নেছার বাবার বাড়ি। বর্ষা মৌসুমে ভীমরুলী, আটঘর-কুরিয়ানায় পেয়ারা বাগান ঘোরাঘুরি জনপ্রিয়।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ঝালকাঠি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন স্থানে পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘর্ষ ঘটে।
ঝালকাঠি একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর যা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক দিক থেকে সমৃদ্ধ। ভবিষ্যতে এ শহর আরও উন্নত হবে বলে আশা করা যায়।