হাফেজ হাবীবুর রহমান (১৯১৫-২৪ ডিসেম্বর ১৯৮৫) ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, লেখক ও প্রকাশক। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার জন্ম ব্রিটিশ ভারতের চাঁদপুরের মতলব উপজেলার বোরোচর গ্রামে।
শিক্ষাজীবনে তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় কোরআন হাফেজ হন এবং ফাজিল (স্নাতক) ডিগ্রী লাভ করেন। পরে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করে এমএ ডিগ্রী লাভ করেন। কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বন্ধুত্ব হয়।
তিনি ১৯৫০ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং ভাষা আন্দোলনসহ নানা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হন। ১৯৬৬ সালে দলের সহ-সভাপতি হন এবং বঙ্গবন্ধু কারাভোগের সময় দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ছয় দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে কুমিল্লা-১২ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
স্বাধীনতা পরবর্তীতে, তিনি বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি 'সোনার বাংলা' ও 'বাংলার বাণী' নামে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশের সাথে জড়িত ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি হাফেজ হাবীবুর রহমান বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেছেন। পুরান ঢাকার বাংলাবাজারে 'আইডিয়াল পাবলিকেশন্স' নামে এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করেছিলেন।
১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর স্বাস্থ্যগত ও পারিবারিক কারণে রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। ২৪ ডিসেম্বর ১৯৮৫ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এবং বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।