১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তন করে পরদিন ১১ জানুয়ারী অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন। এই আদেশ অনুসারে, ১৯৭০ ও ১৯৭১ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে একটি গণপরিষদ গঠিত হয়। এই গণপরিষদই নতুন সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব পায়।
১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে, ১১ এপ্রিল, গণপরিষদে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। ৩৪ জন সদস্য নিয়ে গঠিত কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ হলেন তাজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, এ এইচ এম কামারুজ্জামান, এবং আরও অনেকে। কমিটিতে একমাত্র বিরোধী দলের সদস্য ছিলেন ন্যাপ (মোজাফফর) এর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি জনগণের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমেও প্রস্তাব আহ্বান করা হয়। কমিটি ৯৮টি স্মারকলিপি পায়। কমিটি বেশ কয়েকটি বৈঠক করে ৩ জুন ১৯৭২ সালে সংবিধানের একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া প্রণয়ন করে। খসড়াটি পর্যালোচনা এবং সংশোধনের পর ১০ জুনে অনুমোদিত হয়। এরপর অক্টোবরের ১২ তারিখে ড. কামাল হোসেন খসড়া সংবিধান গণপরিষদে পেশ করেন। ৪ঠা নভেম্বর গণপরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে সংবিধান বিল পাস করে। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে সংবিধান কার্যকর হয়।
খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির কাজের ফলেই বাংলাদেশের একটি স্থায়ী সংবিধান প্রণয়ন সম্ভব হয়েছিল। তবে প্রণয়ন কালীন সময় থেকেই এই সংবিধান বিপুল সমালোচনার মুখে পড়েছে।