সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা, রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকা। উত্তরে কাজীপুর, দক্ষিণে কামারখন্দ ও বেলকুচি, পূর্বে সরিষাবাড়ী, ভুঞাপুর ও কালিহাতি (যমুনা নদী দিয়ে), এবং পশ্চিমে কামারখন্দ, রায়গঞ্জ ও ধুনট উপজেলার সাথে এর সীমান্ত। যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এই উপজেলাটি এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং উন্নয়নের ধারার জন্য সুপরিচিত।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
সিরাজগঞ্জ নামকরণের ইতিহাস বেশ রোমাঞ্চকর। এক ভূস্বামী সিরাজউদ্দিন চৌধুরীর নামানুসারেই এর নামকরণ। যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে একাধিকবার স্থান পরিবর্তন করে বর্তমান অবস্থানে স্থায়ী হয়। ১৭৭২ সালে ময়মনসিংহ জেলার অধীনে সিরাজগঞ্জ সদর থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৪ সালে তা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। সিরাজগঞ্জ দেশের রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯২৪ সালে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কংগ্রেসের সম্মেলনে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস পরিচালিত স্বরাজ পার্টির বিখ্যাত হিন্দু-মুসলিম প্যাক্ট অনুমোদিত হয়। মহাত্মা গান্ধী ও সুভাষচন্দ্র বসুও সিরাজগঞ্জ সফর করেছিলেন। ১৯৪২ সালে মুসলিম লীগের সম্মেলন ও অনুষ্ঠিত হয় সিরাজগঞ্জে। মুক্তিযুদ্ধেও সিরাজগঞ্জ সদর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
৩২০.১৫ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৫৫৫,১৫৫ জন (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী)। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। যমুনা নদীসহ ইছামতি, হুরাসাগর প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য জলাশয় রয়েছে এ উপজেলায়।
অর্থনীতি:
সিরাজগঞ্জ সদরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম প্রভৃতি প্রধান কৃষি ফসল। এছাড়াও তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, পাট ও পাটজাত শিল্প উল্লেখযোগ্য। বঙ্গবন্ধু সেতু এই উপজেলার অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এই উপজেলায়। এখানে একাধিক মেডিকেল কলেজ, ডিগ্রি কলেজ, হাইস্কুল ও মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পল্লীচিকিৎসা কেন্দ্র প্রভৃতি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য স্থান:
- বঙ্গবন্ধু সেতু
- বঙ্গবন্ধু সেতু ইকো পার্ক
- শেখ রাসেল পৌর শিশু পার্ক
- ইলিয়ট ব্রিজ (লোহার পুল)
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উন্নয়নের এক অপূর্ব সমন্বয়। এই উপজেলার উন্নয়নে আরও অনেক কাজ করার অবকাশ রয়েছে।