সাতক্ষীরা সদর

আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২:৩৪ পিএম

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা: বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা। ৩৯৮.৫৭ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলাটি ২২°৩৭´ থেকে ২২°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫৫´ থেকে ৮৯°১০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে কলারোয়া, দক্ষিণে দেবহাটা ও আশাশুনি, পূর্বে তালা উপজেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এর সীমানা।

জনসংখ্যা ও জনগোষ্ঠী: ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সাতক্ষীরা সদরের জনসংখ্যা ৪৬০,৮৯২। এর মধ্যে পুরুষ ২৩০,৬২৮ এবং মহিলা ২৩০,২৬৪। ধর্মীয়ভাবে, ৪০০,১২৬ জন মুসলিম, ৫৯,৪১৯ জন হিন্দু, ১০ জন বৌদ্ধ, ৮৮৫ জন খ্রিস্টান এবং ৪৫২ জন অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

প্রশাসন: ১৯৮৪ সালে সাতক্ষীরা সদর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ১৮৬৯ সালে পৌরসভা গঠিত হয়। উপজেলা শহরের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র হল সুলতানপুর বাজার (প্রাচীন নাম প্রাণসায়র বাজার)।

ঐতিহাসিক স্থাপনা ও প্রত্নসম্পদ: সুলতানপুর শাহী মসজিদ, লাবসা জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ, চম্পা মায়ের মাযার, বৈকারী শাহী মসজিদ ও হোজরাখানা (১৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দ), ঝাউডাঙ্গা তহসীল অফিস, জগন্নাথ দেবের মন্দির, ছয়ঘরিয়া জোড়া শিব মন্দির, এবং সাতক্ষীরা পঞ্চমন্দির (অন্নপূর্ণা, কালী, শিব, কালভৈরব ও রাধা-গোবিন্দ মন্দির) উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধ: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৮ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান থেকে অর্থ লুট করে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকে জমা রাখে। ২০ ও ২১ এপ্রিল ঝাউডাঙ্গা ও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শরণার্থী শিবিরে পাকবাহিনীর গণহত্যা হয়। এছাড়াও বেশ কিছু লড়াই এবং বধ্যভূমি স্মৃতিচিহ্নিত করে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: উপজেলায় ৩৯৬ টি মসজিদ, ১৭ টি মন্দির, ২ টি গির্জা এবং ৩ টি মাযার রয়েছে। সুলতানপুর শাহী মসজিদ, চম্পা মায়ের মাযার, পুরাতন সাতক্ষীরা কালীমন্দির, ব্রহ্মরাজপুর কাল ভৈরব মন্দির উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষা: গড় শিক্ষার হার ৫৬.৫%। হোমিওপ্যাথিক কলেজ, ল’ কলেজ, ১১ টি কলেজ, পিটিআই, ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, বেসরকারি কারিগরি বিদ্যালয়, ৭২ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২৮৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১১ টি কিন্ডারগার্টেন, এবং ৪৮ টি মাদ্রাসা রয়েছে। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, প্রাণনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আলিয়া কামিল মাদ্রাসা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

অর্থনীতি: কৃষি (৫৬.৮৯%), ব্যবসা (১৫.৫৭%), চাকুরি (৭.৮৫%) প্রধান আয়ের উৎস। প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আখ, সরিষা, আলু, ডাল, শাকসবজি। আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, নারিকেল, লিচু প্রভৃতি ফল উৎপাদন হয়। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ: ৩৭২ কিমি পাকা রাস্তা, ৬২ কিমি আধা-পাকা রাস্তা এবং ৪২০ কিমি কাঁচা রাস্তা রয়েছে।

উল্লেখযোগ্য তথ্য: পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতায় ৫৮.৩% পরিবার বিদ্যুতের সুযোগ পায়। নলকূপ (৮৩.১%), ট্যাপ (১৪.৩%) পানীয়জলের উৎস। ৫৪.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ব্র্যাক, কেয়ার, বাংলাদেশ ভিশন প্রভৃতি এনজিও কার্যক্রম পরিচালনা করে।

মূল তথ্যাবলী:

  • সাতক্ষীরা সদর উপজেলা খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত।
  • এর আয়তন ৩৯৮.৫৭ বর্গ কিমি এবং জনসংখ্যা প্রায় ৪.৬ লাখ।
  • ১৯৮৪ সালে থানা থেকে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
  • সুলতানপুর বাজার এর প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র।
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থাপনার সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।