সাতক্ষীরা সদর উপজেলা: ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়নের এক অপরূপ সমন্বয়
বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত সাতক্ষীরা সদর উপজেলা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ সমন্বয়ে ভরপুর একটি অঞ্চল। ৩৯৮.৫৭ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলা উত্তরে কলারোয়া, দক্ষিণে দেবহাটা ও আশাশুনি, পূর্বে তালা উপজেলা এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাথে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে। ২০২৩ সালের হিসেবে, উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৪৬০,৮৯২ জন।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
প্রাচীনকালে বাগড়ী, ব্যাঘ্রতট, সমতট, যশোর, চূড়ন প্রভৃতি নামে পরিচিত এই অঞ্চলের নামকরণের পেছনে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। ১৮৬১ সালে যশোর জেলার অধীনে সাতক্ষীরা মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৮৮২ সালে খুলনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৯৮৪ সালে স্বাধীন জেলা হিসেবে উন্নীত হয়। সাতক্ষীরা সদর থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। ১৮৬৯ সালে পৌরসভা গঠন করা হয়। সুলতানপুর বড়বাজার (প্রাচীন নাম প্রাণসায়ের বাজার) উপজেলা শহরের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র।
প্রকৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থান:
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা বঙ্গোপসাগরের উপকূলের নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত। বেতনা, ইছামতি, খোলপেটুয়া নদী এবং নাওখালী খাল, লাবণ্যবতী খাল উপজেলার প্রধান জলাশয়। উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে সুন্দরবনের অংশ বিস্তৃত।
অর্থনীতি:
এই উপজেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, আখ, সরিষা, আলু, ডাল, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। মৎস্য চাষ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। চিংড়ি, সুতা, হস্তশিল্পজাত দ্রব্যসামগ্রী, কুল, ধান, চাল প্রধান রপ্তানি দ্রব্য।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য:
সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় সুলতানপুর শাহী মসজিদ, জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ (লাবসা) ও চম্পা মায়ের মাযার, বৈকারী শাহী মসজিদ ও হোজরাখানা, ঝাউডাঙ্গা তহসীল অফিস ও শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের মন্দির, ছয়ঘরিয়া জোড়া শিব মন্দির, সাতক্ষীরা পঞ্চমন্দির ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
উপজেলায় বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজ, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য সেবার জন্য জেলা সদর হাসপাতাল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র প্রভৃতি রয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রকৃতির সৌন্দর্য, কৃষি ও অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতির কারণে বাংলাদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই উপজেলার উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির অগ্রগতির পথ সুগম হবে।