সাতকানিয়া: চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা হল সাতকানিয়া। চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত এই উপজেলাটির আয়তন প্রায় ২৮০.৯৭ বর্গকিলোমিটার। ২২°০১´ থেকে ২২°১৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৭´ থেকে ৯২°১০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে এর অবস্থান। উত্তরে চন্দনাইশ, দক্ষিণে লোহাগাড়া, পূর্বে বান্দরবান সদর এবং পশ্চিমে বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলা সাতকানিয়ার সীমান্তবর্তী। প্রধান নদী হিসেবে সাঙ্গু নদী এবং ডলু নদী উল্লেখযোগ্য।
জনসংখ্যা ও জনমিতি:
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সাতকানিয়ার জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩৮৪,৮০৬ জন। পুরুষের সংখ্যা ১৮৬,০০৭ এবং মহিলার সংখ্যা ১৯৮,৭৯৯। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বসবাস এই উপজেলায় রয়েছে। মগ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বও সাতকানিয়ায় লক্ষ্যনীয়। শিক্ষার হার প্রায় ৫২.৭%।
ঐতিহাসিক ঘটনা ও প্রত্নতত্ত্ব:
ব্রিটিশ শাসনামলে প্রশাসনিক ও বিচার কাজের সুবিধার জন্য সাতকানিয়া-বাঁশখালী আদালত ভবনের নিকটে ৭ কানি (২৮০ শতক) জমি দান করা হয়। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই জমিদানের কারণেই উপজেলার নামকরণ হয় সাতকানিয়া। ১৯১৭ সালে সাতকানিয়া থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাটি উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। পঞ্চদশ শতাব্দীর দারোগা মসজিদ, ডেপুটি মসজিদ, ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুদ্রা, ঠাকুর দীঘি, কোতওয়াল দীঘি, শিব মন্দির, গির্জা এবং মন্দির ইত্যাদি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উপজেলায় বিদ্যমান। মুক্তিযুদ্ধে সাতকানিয়ায়ও ব্যাপক সংঘর্ষ হয় এবং অনেক নিরীহ লোক নিহত হয়।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড:
কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, পরিবহন এবং চাকুরীজীবীদের উপর উপজেলার অর্থনীতি নির্ভরশীল। ধান, আলু, সরিষা, চীনাবাদাম, কলাই, হলুদ, তুলা, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। চালকল, আটাকল, বরফকল, করাতকল, কাঠ শিল্প, ওয়েল্ডিং কারখানা, স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প ইত্যাদি শিল্প ও কুটিরশিল্পের মধ্যে রয়েছে। সাতকানিয়া একটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
সাতকানিয়ায় অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, এবং মাদ্রাসা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে।
যোগাযোগ:
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সাতকানিয়ার প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। পাকা, আধা-পাকা এবং কাঁচা রাস্তা নেটওয়ার্ক উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সমর্থন করে।
অতিরিক্ত তথ্য:
সাতকানিয়া পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ সমূহ উপজেলার প্রশাসনিক ইউনিট। আশা, ব্র্যাক, প্রশিকা সহ বিভিন্ন এনজিও সাতকানিয়ায় কাজ করে।
এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে এবং আগামীতে আরও বিস্তারিত তথ্য যুক্ত করে এই প্রবন্ধটি আরও সমৃদ্ধ করা হবে।