সহনশীলতা: একটি গুণ, একটি আদর্শ
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে নানা পেশা, ধর্ম, শ্রেণী ও মতামতের মানুষ বাস করে। তাদের ভিন্ন ভিন্ন আচরণ ও মূল্যবোধকে গ্রহণ ও সম্মান করাই হলো সহনশীলতা। এটি একটি গুণ যা জন্মগত হতে পারে, আবার শিক্ষার মাধ্যমেও অর্জন করা যায়। অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মতে, সহনশীলতা অন্যের মত ও আচরণকে সহ্য করা, অন্যের অধিকার মেনে নেওয়া এবং মনকে উদার করে তোলা।
আমাদের সমাজে সহনশীলতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠে। রাজনীতি থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে এর অভাব লক্ষ্য করা যায়। একটি টেলিভিশন আলোচনায় দুই রাজনীতিবিদের তীব্র তর্ক দেখে মনে হয়েছে, সহনশীলতা তাদের কাছে অধরা। কিন্তু, সহনশীলতা সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত নয়। মায়েরা, কৃষকেরা, শ্রমিকেরা - এরা সহনশীলতার প্রতিচ্ছবি। তবে, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ অনেক ক্ষেত্রে এটিকে দুর্বলতা মনে করেন।
শিক্ষিতদের মধ্যেও সহনশীলতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সহনশীলতার অভাবের ভয়াবহতার প্রমাণ। সহনশীলতা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, পরিবার, এমনকি দুই বন্ধুর মধ্যেও সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব।
সহনশীলতা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি প্রতিষ্ঠানে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সহনশীল মানুষ শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহনশীলতাকে শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
পরিবারে সহনশীলতা অত্যাবশ্যক। নারীর স্ব-ক্ষমতায়ন ও শিক্ষার প্রসারে পরিবারে কর্তৃত্বের ধারণা পরিবর্তিত হচ্ছে, তবুও সহনশীলতা সম্পূর্ণ পরিবারের সুস্থতা নিশ্চিত করে। এটি শ্রদ্ধা ও পরস্পর নির্ভরশীলতার বিকাশে সহায়তা করে।
সহনশীলতা মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব, দাম্পত্য ও পিতৃ-মাতৃত্বের মূল্যবান সম্পর্ক গড়ে তোলে। রাষ্ট্রে সহনশীলতা গণতন্ত্রকে সুন্দর ও আদর্শ করে তোলে। ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, অর্থ ও অহংকার সহনশীলতার অন্তরায়। সহনশীলতা শেখা যায় এবং এটি মানুষকে সৃজনশীল করে তোলে।