শ্বেতপত্র: গণতন্ত্রের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ
শ্বেতপত্র (White Paper) হলো একটি সরকারি নথি যা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়, নীতি বা প্রস্তাবিত আইনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও তথ্য উপস্থাপন করে। এটি জনগণকে অবহিত করার পাশাপাশি সরকারের নীতি ও কর্মপন্থা সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাজ্যের সংসদীয় গণতন্ত্রের সাথে এই প্রথার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশেও এর প্রচলন রয়েছে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
শ্বেতপত্র জারির প্রথা বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধেই দেখা গেছে। উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল চার্চিল হোয়াইট পেপার (১৯২২) এবং একীভূত প্যালেস্টাইনীয় রাজ্য গঠন সংক্রান্ত শ্বেতপত্র (১৯৩৯)। ১৯৬৮ সালে জনপ্রশাসন সংস্কার সম্পর্কিত ফুলটন কমিটির প্রতিবেদন ‘স্বচ্ছ সরকার’ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে, যা এই প্রথার আরও ব্যাপক প্রচলনে ভূমিকা পালন করে। অস্ট্রেলিয়ার পূর্ণ কর্মসংস্থান (১৯৪৫) এবং কানাডার প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শ্বেতপত্র (১৯৬৪) উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
বাংলাদেশে শ্বেতপত্রের ব্যবহার:
বাংলাদেশে শ্বেতপত্রের ব্যবহার পশ্চিমা দেশগুলির তুলনায় কিছুটা ভিন্ন। এখানে এটি প্রধানত কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক বিরোধী দলের সরকারের কুকীর্তি তুলে ধরার জন্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০০১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার এ ধরণের একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল।
বিকল্প পদ্ধতি:
যুক্তরাজ্যসহ অনেক পশ্চিমা দেশে ‘সবুজপত্র’ (Green Paper) জারির প্রথাও রয়েছে। সবুজপত্রে জনসাধারণের মতামত নেওয়ার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও মতামত আহ্বান করা হয়। বাংলাদেশে এ ধরণের প্রথা নেই, তবে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদক্ষেপ নেওয়ার পূর্বে ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও দাতাগোষ্ঠীর সাথে আলোচনার রেওয়াজ রয়েছে।
উপসংহার:
শ্বেতপত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণকে অবহিত রাখা ও সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যদিও বাংলাদেশে এর ব্যবহার পশ্চিমা দেশগুলির তুলনায় ভিন্ন, তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রতি জোর দেওয়ার মাধ্যমে এ প্রথার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।