সরকারি নীতি

আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২৫, ৩:০০ এএম

বাংলাদেশের সরকারি নীতি: একটি বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের সরকারি নীতি (Public Policy) হলো রাষ্ট্রের বৈধ সরকারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত জনস্বার্থ সম্পৃক্ত নীতিমালা। এই নীতিমালা প্রণয়নে বাংলাদেশের সংবিধান মূল নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। নীতিমালায় জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কৌশল নির্ধারণ করা হয়। সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়ন সংক্রান্ত মূল আদর্শ জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। সংবিধান রাষ্ট্রের নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদিকা শক্তির অব্যাহত বিকাশ এবং জনগণকে পূর্ণোদ্যমে কাজ করার এবং যুক্তিযুক্ত বিশ্রাম/বিনোদন ও অবসর লাভের সুবিধা এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদানপূর্বক তাদের বৈষয়িক ও সাংস্কৃতিক জীবনমানের উত্তরোত্তর উন্নয়ন সাধনের দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর অর্পণ করেছে (অনুচ্ছেদ ১৫)।

সংবিধানের ৮ থেকে ২৫ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রীয় নীতির মূল আদর্শ বর্ণিত হয়েছে। এগুলোর আলোকেই সরকারি নীতিমালার রূপরেখা তৈরি হয়। এসব অনুচ্ছেদের মধ্যে যেগুলো সরকারি নীতিমালার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: (১) সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস (অনু. ৮); (২) স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন (অনু. ৯); (৩) জাতীয় জীবনে মহিলাদের অংশগ্রহণ (অনু. ১০); (৪) মালিকানা সংক্রান্ত নীতিমালা (অনু. ১৩); (৫) কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তি (অনু. ১৪); (৬) মৌলিক চাহিদার সংস্থান (অনু. ১৫); (৭) পল্লী উন্নয়ন এবং কৃষি বিপ্লব (অনু. ১৬); (৮) বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষা (অনু. ১৭) এবং (৯) নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ (অনু. ২২)।

নীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়া:

বাংলাদেশে সরকারি নীতি প্রণয়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে বিভিন্ন স্তরের সংস্থা ও ব্যক্তি জড়িত।

  • মন্ত্রিপরিষদ: রাষ্ট্রীয় নীতিভিত্তিক প্রশাসন পরিচালনায় দিকনির্দেশনা দান করে। ১৯৯৬ সালের কার্যপ্রণালী বিধিমালার ৪ (খ) ধারা অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন ব্যতীত গুরুত্বপূর্ণ কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে পারে না। মন্ত্রিপরিষদের বিভিন্ন কমিটি বিভিন্ন নীতির পর্যালোচনা করে।
  • মন্ত্রণালয়: স্বতন্ত্র ও নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকান্ড পরিচালনা করে। নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • সচিব কমিটি: মন্ত্রিপরিষদ কমিটির অধীনে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও সরকারের নীতি সংক্রান্ত বিষয়াদি পর্যবেক্ষণ করে।
  • জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ: প্রধান অর্থনৈতিক নীতি ও উন্নয়ন কৌশল অনুমোদন করে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার জন্য জাতীয় নীতি প্রণয়ন ও লক্ষ্য নির্ধারণ করে।
  • পরিকল্পনা কমিশন: পরিকল্পনা প্রণয়নের কেন্দ্রীয় সংস্থা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্দেশ অনুযায়ী জাতীয় পরিকল্পনা ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করে।
  • সংসদীয় কমিটি: সংবিধানের ৭৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আইন প্রণয়ন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ড বা অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় তদন্ত করে।
  • বৈদেশিক দাতাগোষ্ঠী: বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এবং নীতি প্রণয়ন, পরিবর্তন ও সংশোধনে প্রভাব বিস্তার করে। বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অন্যতম প্রভাবশালী দাতা।

উপসংহার:

বাংলাদেশের সরকারি নীতি প্রণয়ন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া, যেখানে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির ভূমিকা অপরিহার্য। নীতিমালা জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ ও জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখার লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • বাংলাদেশের সংবিধান সরকারি নীতির মূল নির্দেশিকা
  • জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ নীতি প্রণয়নের মূল লক্ষ্য
  • মন্ত্রিপরিষদ, মন্ত্রণালয়, সচিব কমিটি, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ, পরিকল্পনা কমিশন, সংসদীয় কমিটি জড়িত
  • বৈদেশিক দাতাগোষ্ঠীর নীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
  • ১৯৯৬ সালের কার্যপ্রণালী বিধিমালা নীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।