বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী লালন শাহ (১৭৭৪-১৮৯০) বাংলা সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ। বাউল সাধনার অগ্রদূত, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক ও দার্শনিক, গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক হিসেবে তিনি অতুলনীয়। তার অসংখ্য গান যুগে যুগে মানুষকে প্রভাবিত করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, এবং অ্যালেন গিন্সবার্গের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ লালনের দর্শনে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
লালনের জন্মস্থান ও জন্মতারিখ নিয়ে বিতর্ক আছে। কিছু সূত্র অনুযায়ী তিনি ঝিনাইদহের হরিশপুরে, আবার অন্য সূত্রে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ভাড়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বলে জানা যায়। তার পিতার নাম কাজী দরীবুল্লাহ্ দেওয়ান, মাতার নাম আমিনা খাতুন। তার দুই কিংবা চার ভাই ছিলেন বলে জানা যায়। তরুণ বয়সে তীর্থযাত্রার সময় গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে তাকে তার সঙ্গীরা পরিত্যাগ করে যায়। পরবর্তীতে মলম শাহ তাকে উদ্ধার করেন।
লালন কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় একটি আখড়া তৈরি করেন এবং তার শিষ্যদের নীতি ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিতেন। তার শিষ্য সংখ্যা দশ হাজারের বেশি ছিল বলে শোনা যায়। প্রতি শীতকালে তিনি ভান্ডারা আয়োজন করতেন।
লালনের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তিনি কোন ধর্মের রীতিনীতি পালন করতেন না। তিনি হিন্দু ও ইসলাম ধর্ম উভয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখতেন। তাঁর মতবাদকে কোনো ধর্মীয় আদর্শের অন্তর্গত করা যায় না। তিনি মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী ছিলেন।
লালন ১৮৯০ সালের ১৭ই অক্টোবর ছেউড়িয়াতে মারা যান। তার মৃত্যুর পর কোন ধর্মীয় রীতি পালন করা হয়নি।
লালনের গান ‘লালনগীতি’ বা ‘লালন সংগীত’ হিসেবে পরিচিত। তিনি প্রায় দুই হাজার গান রচনা করেছেন বলে ধারণা করা হয়। তার গান মানুষ ও সমাজকে কেন্দ্র করে রচিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালনের কুড়িটি গান ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। ফরিদা পারভীন, আনুশেহ আনাদিল, অরূপ রাহী, মশিউর রহমান রিংকু লালন গানের জনপ্রিয় শিল্পী।
লালনকে নিয়ে বহু গ্রন্থ, উপন্যাস, চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। ছেউড়িয়ায় লালন একাডেমী প্রতিষ্ঠিত। লালনের মৃত্যুদিবস ও দোল পূর্ণিমায় লালন উৎসব পালিত হয়।