রশিদ চৌধুরী: বাংলাদেশের অগ্রণী তাপিশ্রী শিল্পী ও চারুকলা শিক্ষাবিদ
রশিদ হোসেন চৌধুরী (১ এপ্রিল, ১৯৩২ - ১২ ডিসেম্বর, ১৯৮৬), ছদ্মনাম কনক, বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, লেখক ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে তাপিশ্রী (ট্যাপিস্ট্রি) শিল্পের একজন অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত। তার সৃজনশীল কাজ ও আধুনিক শিল্প আন্দোলনে অবদানের জন্য তিনি বহুল প্রশংসিত ছিলেন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা: রাজবাড়ির রতনদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণকারী রশিদ চৌধুরীর পিতা ছিলেন খানবাহাদুর ইউসুফ হোসেন চৌধুরী এবং মাতা শিরিন নেসা চৌধুরানী। তিনি নয় ভাই এবং চার বোনের মধ্যে একজন ছিলেন। ১৯৪৯ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি ঢাকা সরকারি আর্ট কলেজে (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) ভর্তি হন। ১৯৫৪ সালে প্রথম বিভাগে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এরপর, তিনি স্পেনের মাদ্রিদ এবং ফ্রান্সের প্যারিসে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, যেখানে তিনি ভাস্কর্য, ফ্রেস্কো এবং তাপিশ্রী শিল্পের ওপর দক্ষতা অর্জন করেন।
কর্মজীবন ও শিল্পকর্ম: রশিদ চৌধুরী ঢাকা সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম চারুকলা মহাবিদ্যালয় (বর্তমানে চারুকলা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার শিল্পকর্মে তিনি তাপিশ্রী, তেলরং, জলরং, টেম্পেরা, এবং গোয়াশ মাধ্যম ব্যবহার করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ‘সোনাভানু’, ‘ভয়’, ‘বাংলার বিদ্রোহ’, ‘ধান কাটা’, ‘চাকমা তরুণী’, ‘প্রকৃতি’ , ‘আমার সোনার বাংলা’ ইত্যাদি। তার তাপিশ্রীগুলো দেশের ও বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় (যেমন, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় সংসদ ভবন) স্থাপিত আছে। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্যারিসে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং যুদ্ধোত্তর সময় দেশে ফিরে আসেন।
স্বীকৃতি ও সম্মান: চারুকলায়, বিশেষ করে তাপিশ্রী শিল্পে অবদানের জন্য রশিদ চৌধুরী ১৯৭৭ সালে একুশে পদক এবং ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তার কাজ গুণগান গেয়েছে অনেক শিল্প সমালোচক।
ব্যক্তিগত জীবন: রশিদ চৌধুরী দুইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথমে একজন ফরাসি ভাস্করকে এবং পরে একজন বাংলাদেশী নারীকে। তার দুই কন্যা ছিল। ১৯৮৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ৫৪ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় মারা যান।
রশিদ চৌধুরীর কাজ বাংলাদেশের শিল্প ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তিনি শিল্পের প্রতি উৎসর্গীকৃত জীবনযাপন করেছেন।