নায়করাজ রাজ্জাক: বাংলা চলচ্চিত্রের এক অমূল্য সম্পদ
আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ। ‘নায়করাজ রাজ্জাক’ নামে পরিচিত এই কিংবদন্তি অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক ১৯৪২ সালের ২৩শে জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আকবর হোসেন এবং মাতার নাম নিসারুননেছা। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে পড়াশোনা করার সময় থেকেই তিনি অভিনয়ের সাথে জড়িত হন। ‘বিদ্রোহী’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবনের সূচনা হয়।
কলকাতায় রতন লাল বাঙালী, পঙ্ক তিলক, শিলালিপি প্রভৃতি ছবিতে অভিনয়ের পর তিনি বোম্বেতেও অভিনয় শিক্ষা গ্রহণ করেন। কলকাতার উত্তম কুমার, তপন সিনহা, পীযূষ সাহা এবং বোম্বের দিলিপ কুমার, শশধর মুখার্জী প্রভৃতি কিংবদন্তিদের সান্নিধ্যে অভিনয়ের দক্ষতা আরও বিকশিত হয়। ১৯৬৪ সালে কলকাতার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তিনি পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন।
১৯৬৬ সালে বশীর আহমেদের ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন। জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছবিতে সুচন্দার বিপরীতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসেন। সুচন্দা, কবরী, শাবানা, ববিতা প্রভৃতি নায়িকাদের সাথে জুটি বেঁধে তিনি অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। রাজ্জাক-কবরী জুটি ছিল অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি চারশতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন, এর মধ্যে তিনশতের বেশি ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করার রেকর্ড তাঁরই।
১৯৭৭ সালে ‘অনন্ত প্রেম’ ছবি পরিচালনার মাধ্যমে পরিচালক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি ১৬টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন, যার মধ্যে ‘জীনের বাদশাহ’, ‘বদনাম’, ‘প্রফেসর’, ‘বাবা কেন চাকর’ উল্লেখযোগ্য। ‘রাজলক্ষ্মী প্রডাকশন’ নামে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে তিনি বেশ কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন।
অভিনয় ও পরিচালনার পাশাপাশি তিনি উর্দু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। ‘আখেরি স্টেশন’, ‘উজালা’, ‘গৌরি’ ইত্যাদি উর্দু সিনেমায় তার অভিনয় ছিল অসাধারণ। তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন, এছাড়াও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৫ সালে তাকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়। তিনি UNFPA এর শুভেচ্ছা দূত ছিলেন।
২০১৭ সালের ২১শে আগস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এই কিংবদন্তি। তার মৃত্যু বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।