মাসুদ রানা বাংলাদেশের সাহিত্যে একটি বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র, যিনি গোয়েন্দা উপন্যাসের মধ্যদিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। কাজী আনোয়ার হোসেন কর্তৃক সৃষ্ট এই চরিত্রটি ১৯৬৬ সালে ‘ধ্বংস পাহাড়’ উপন্যাসের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর থেকে সেবা প্রকাশনীর ব্যানারে ৪০০-এরও বেশি গোয়েন্দাগিরি, রহস্য ও অ্যাডভেঞ্চারের উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে মাসুদ রানা সিরিজে। প্রথম দিকের উপন্যাসগুলো মৌলিক হলেও পরবর্তীতে অনেকগুলো ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার উপন্যাসের অনুবাদ বা অনুপ্রেরণা থেকে লেখা হয়েছে। মাসুদ রানাকে জেমস বন্ডের বাংলা সংস্করণ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। তিনি একজন প্রাক্তন সেনাবাহিনীর মেজর এবং কাল্পনিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স (বিসিআই) এর সদস্য, যার সাংকেতিক নাম MR-9। তিনি নিজেই রানা এজেন্সি নামে একটি গোয়েন্দা সংস্থা পরিচালনা করেন। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী বইগুলোতে এ সংস্থাটি পি.সি.আই (পাকিস্তান কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) হিসেবে উল্লেখিত ছিল।
মাসুদ রানার সহায়ক চরিত্র হিসেবে মেজর জেনারেল রাহাত খান (বিসিআই প্রধান), সোহেল, সলিল, সোহানা, রূপা, গিলটি মিয়া প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। কবীর চৌধুরী এবং উ সেন তার চিরশত্রু। অধিকাংশ কাহিনীই বিভিন্ন বিদেশি লেখকের কাজ থেকে ধার করা হলেও, মাসুদ রানার চরিত্র, তার অভিযান ও দেশপ্রেমের মধ্যে একটি স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। মাসুদ রানার উপন্যাসগুলো বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং বহু বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। সমালোচনা ও বিতর্কের জবাবে সেবা প্রকাশনী ‘আলোচনা’ বিভাগ চালু করে। মাসুদ রানা সিরিজের উপর ভিত্তি করে ১৯৭৪ সালে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। আধুনিক যুগেও এই সিরিজটি নিয়ে নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রচেষ্টা চলছে। মাসুদ রানা সিরিজের লেখক নিয়েও বিতর্ক রয়েছে, কাজী আনোয়ার হোসেন ছাড়াও শেখ আব্দুল হাকিম ও ইফতেখার আমিন লেখকত্বের দাবী করেছেন। আইনি লড়াইয়ের পর ২০২১ সালে ‘মাসুদ রানা’ সিরিজের ২৬০টি এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজের ৫০টি বইয়ের লেখক হিসেবে স্বত্ব প্রয়াত শেখ আব্দুল হাকিমের কাছে চলে যায়।