মধুপুর: টাঙ্গাইলের মনোমুগ্ধকর শহর
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলায় অবস্থিত মধুপুর শহর, বংশী নদীর তীরে অবস্থিত একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ শহর। টাঙ্গাইল শহর থেকে ৫১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং ঢাকা শহর থেকে ১৩৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এর অবস্থান। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, মধুপুর শহরের জনসংখ্যা ৫৬,৩৪২ এবং ঘরের সংখ্যা ১৩,৭১৩। শহরের সাক্ষরতার হার ৫৬.৭% (পুরুষ ৫৮.৭%, মহিলা ৫৪.৫%)।
- *ঐতিহাসিক গুরুত্ব:** মধুপুর শুধুমাত্র একটি শহর নয়, এটি ঐতিহাসিকভাবেও সমৃদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মালাউড়ী ও রাঙামাটিয়া গ্রামে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। মধুপুর কর্দম, মধুপুর গড় এবং মধুপুর জাতীয় উদ্যান এর ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক গুরুত্ব বহন করে। মধুপুর কর্দম প্রাচীন সভ্যতার অস্তিত্বের সাক্ষী এবং ভূ-তাত্ত্বিকদের অধ্যয়নের বিষয়। মধুপুর গড়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম, এটি প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য ধারণ করে। মধুপুর জাতীয় উদ্যান ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম জাতীয় উদ্যান।
- *ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিবেশ:** মধুপুর উপজেলার আয়তন ৩৬৬.৯২ বর্গ কিলোমিটার। উত্তরে মুক্তাগাছা ও জামালপুর, দক্ষিণে গোপালপুর ও ঘাটাইল, পূর্বে ফুলবাড়ীয়া ও মুক্তাগাছা, এবং পশ্চিমে ধনবাড়ী ও গোপালপুর উপজেলা মধুপুরের সীমান্তবর্তী। বংশী নদী ও গুটা খাল এখানকার উল্লেখযোগ্য জলাশয়। মধুপুর জাতীয় উদ্যান এর প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনা অসম্ভব।
- *অর্থনৈতিক কার্যকলাপ:** কৃষিকর্ম এখানকার প্রধান পেশা। ধান, গম, পাট, আখ, আলু, তুলা, আদা, হলুদ ইত্যাদি ফসল চাষ করা হয়। আনারস, কাঁঠাল, আম, লিচু প্রভৃতি ফলের চাষ এখানকার অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। শিল্প কারখানার মধ্যে সিল্কমিল, রাইসমিল, ফ্লাওয়ারমিল, বেকারি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কুটির শিল্প হিসেবে তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
- *শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:** মধুপুরে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। মধুপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, মধুপুর কারিগরি কলেজ, মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রানী ভবানী উচ্চ বিদ্যালয় ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
- *মধুপুর আজ:** আজকের মধুপুর একটি উন্নয়নশীল শহর। অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিকরণ এবং শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার মধুপুরের অগ্রগতিতে সহায়ক হয়েছে। তবে, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আরও ধনাত্মক পদক্ষেপের প্রয়োজন মধুপুরের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে।